Monday, September 15, 2025
Homeরাজনীতিযুবলীগে নতুন মেরুকরণ, নেতৃত্বে আসছেন কারা

যুবলীগে নতুন মেরুকরণ, নেতৃত্বে আসছেন কারা

বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ ‘বুড়ো’দের বিদায় নিশ্চিত হওয়ার পর নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে আওয়ামী যুবলীগে। অপেক্ষাকৃত একঝাঁক তরুণ প্রস্তুতি নিচ্ছেন নেতৃত্বে আসার। একইসঙ্গে স্থায়ী ঠিকানা হারানোর দুশ্চিন্তায় দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন বুড়িয়ে যাওয়া নেতারাও।

গতকাল সোমবার যুবলীগের বেশ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে আলাপ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। তারা বলেছেন, ভবিষ্যৎ যুবলীগের নেতৃত্বে আসার জন্য ৫৫ বছরের বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আফসোসের পাশাপাশি উচ্ছ্বাসও আছে।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে গত রোববার গণভবনে যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকেও এমন চিত্র ফুটে উঠেছিল। প্রধানমন্ত্রী বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার পর ওই বৈঠকেই নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের কেউ কেউ নীরবে কেঁদেছেন। বয়সসীমা বাড়ানোর অনুরোধ করেছেন। আবার কেউ কেউ হেসেছেন। বয়সসীমা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।

আগামী ২৩ নভেম্বর শনিবার সকাল ১১টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কংগ্রেসে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। কংগ্রেসের মধ্য দিয়ে যুবলীগ থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় নেবেন ৫৫ বছরের বেশি বয়সী সব নেতা।

যুবলীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী সাম্প্রতিক সময়ে নানা কারণে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছেন। গণভবনে প্রবেশের বেলায় নিষিদ্ধের তালিকায় রয়েছে তার নাম। তার ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। বিদেশ সফরেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ অবস্থায় ওমর ফারুক চৌধুরীর সভাপতিত্বে যুবলীগের কংগ্রেসে প্রধানমন্ত্রী আসবেন কি- না, সেটা নিয়ে কয়েকদিন নানামুখী গুজব-গুঞ্জন ছিল।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের বৈঠকে এর অবসান হয়েছে। ওমর ফারুক চৌধুরীকে অব্যাহতি এবং চয়ন ইসলামকে আহ্বায়ক করে কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটি গঠনের পর এ জটিলতা কেটেছে। সেইসঙ্গে যুবলীগে সম্পূর্ণ নতুন মেরুকরণও ঘটেছে। এ নিয়ে গতকাল সোমবার সংগঠনের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা করেছেন।

বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে আগ্রহী প্রার্থীদের অনেকেই বয়সসীমা নির্ধারণের ঘটনায় প্রচণ্ড হতাশ হয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত তিনজন কেন্দ্রীয় নেতা গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর কাছেই হতাশা ব্যক্ত করেছেন। এমনকি তারা বয়সসীমা বাড়ানোর প্রস্তাবও দিয়েছেন। তাতে ইতিবাচক মনোভাব দেখাননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি তাদের কাউকে স্থানীয় রাজনীতি এবং কাউকে যুবলীগের রাজনীতি ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এর উল্টো চিত্রও রয়েছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন নেতা। তাদের ভাষায়, সংগঠনের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে যারা কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না, নতুন নেতা নির্বাচনের বেলায় বয়সসীমা নির্ধারণের সিদ্ধান্তের পর তারা আলোচনার পুরোভাগে এসেছেন। তবে তুলনামূলক বিচারে এ সংখ্যা একেবারেই কম। যদিও তাদের সবাই সৎ, যোগ্য, ত্যাগী এবং পরীক্ষিত।

যুবলীগের ৩৫১ সদস্যের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিতে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া সবাই ৬০ বছর পেরিয়ে গেছেন। কারও কারও বয়স ৭০-এর কোঠা ছাড়িয়েছে। সর্বোচ্চ পাঁচজন কেন্দ্রীয় নেতাও খুঁজে পাওয়া যাবে না, জাতীয় যুবনীতি অনুযায়ী যাদের বয়স ৩৫ বছরের নিচে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদসহ প্রেসিডিয়ামের ২৭ নেতার বেশিরভাগেরই বয়স ৬০ বছর পেরিয়ে গেছে।

অথচ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর তারুণ্যনির্ভর যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যুব নেতা শেখ ফজলুল হক মনি। ওই সময়ে তার বয়স ছিল ৩২ বছর। যুবলীগের প্রথম জাতীয় কংগ্রেসে অনুমোদিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৩৫ বছরের বেশি বয়সী কারও যুবলীগের সদস্য হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। এরপর ওই বয়সসীমা অনুসরণ করা হয়নি। এবার নতুন করে বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে, নতুন আগ্রহ ও উদ্দীপনা নিয়ে নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছেন পদ-পদবিপ্রত্যাশী নেতারা। তারা চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের প্রেক্ষাপটে নিজেদের পরিচ্ছন্ন ইমেজ তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। কংগ্রেসের মাধ্যমে যুবলীগের নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস পাওয়া গেছে। দুর্নীতি ও নানা অপকর্মে জড়িত বিতর্কিতরা নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়বেন। সৎ, দক্ষ, ত্যাগী, পরীক্ষিত, উচ্চশিক্ষিত ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতারা প্রাধান্য পাবেন।

বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়দের মধ্যে শেখ ফজলুল হক মনি, আমির হোসেন আমু এবং শেখ ফজলুল করিম সেলিম যুবলীগের চেয়ারম্যান ছিলেন। অব্যাহতিপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীও বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। তিনি শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ভগ্নিপতি। এসব কারণে যুবলীগ কংগ্রেসের দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলে সংগঠনের চেয়ারম্যান পদে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কোনো না কোনো সদস্য কিংবা আত্মীয়ের নাম আলোচনার পুরোভাগে চলে আসে। আগামীতেও এর ব্যতিক্রম হবে না বলে কেউ কেউ মনে করছেন।

এমন প্রেক্ষাপটে গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নেতাদের বৈঠক চলার সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢাকা-১০ আসনের এমপি ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার খবর চাউর হয়ে পড়ে। অবশ্য পরে তা হয়নি। তবে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির বড় ছেলে অধ্যাপক শেখ ফজলে শামস পরশকে চেয়ারম্যান করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে আগামীতে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নতুন প্রেক্ষাপটে যুবলীগের চেয়ারম্যান পদে আগ্রহ দেখিয়েছেন সংগঠনের প্রেসিডিয়ামের দুই সদস্য আতাউর রহমান ও অ্যাডভোকেট বেলাল হোসাইন। তবে যুবলীগ রাজনীতির বাইরে থাকাদের মধ্য থেকেও কাউকে সংগঠনের চেয়ারম্যান নির্বাচনের কথা শোনা যাচ্ছে। সাধারণ সম্পাদক পদে সম্ভাব্যদের তালিকায় রয়েছেন সংগঠনের দুই যুগ্ম সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, সুব্রত পাল, দুই সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম, ফারুক হাসান তুহিন এবং প্রচার সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার ও বাহাদুর বেপারীর নামও এ আলোচনায় রয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments