Tuesday, September 16, 2025
Homeজাতীয়আইন আদালতদিয়া-রাজীবের মৃত্যু মামলার রায়; তিনজনের যাবজ্জীবন, দুজন খালাস

দিয়া-রাজীবের মৃত্যু মামলার রায়; তিনজনের যাবজ্জীবন, দুজন খালাস

রাজধানীতে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া-রাজীব নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায়ে দুই বাসের চালক ও এক সহকারীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। অপর দুজন আসামীকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আজ রোববার বিকেলে আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।

 

গত বছরের ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর হোটেল র‍্যাডিসনের বিপরীত পাশের জিল্লুর রহমান উড়ালসড়কের ঢালের সামনের রাস্তার ওপর জাবালে নূর পরিবহনের তিনটি বাস রেষারেষি করতে গিয়ে একটি বাস রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনের ওপর উঠে পড়ে। এতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ও ৯ জন আহত হয়।

নিহত দুই শিক্ষার্থী হলো শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব (১৭) ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম (১৬)।

এ ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন।

গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর জাবালে নূর বাসের মালিক শাহাদাত হোসেনসহ ছয়জনকে আসামি করে ঢাকার আদালতে দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় অভিযোগপত্র দেন ডিবির পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম। ছয় আসামির বিরুদ্ধে গত ২৫ অক্টোবর অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

ছয় আসামি হলেন জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাসের মালিক শাহাদাত হোসেন ও জাহাঙ্গীর আলম, দুই চালক মাসুম বিল্লাহ ও জুবায়ের সুমন এবং দুই চালকের দুই সহকারী এনায়েত হোসেন ও কাজী আসাদ। তাঁদের মধ্যে আসাদ পলাতক। আর বাসমালিক শাহাদাত জামিনে আছেন।

অভিযোগ গঠনের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যান জাবালে নূরের মালিক শাহাদাত হোসেন। তাঁর পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ আসে। বাকি পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম চলে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, চালক ও চালকের সহকারীরা বেশি যাত্রী ওঠানোর লোভে যাত্রীদের কথা না শুনে, তাঁদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে জিল্লুর রহমান উড়ালসড়কের ঢালের সামনে রাস্তা ব্লক করে দাঁড়ান। চালক মাসুম বিল্লাহ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ১৪-১৫ জন ছাত্রছাত্রীর ওপর বাস উঠিয়ে দেন। এতে ঘটনাস্থলে দুজন শিক্ষার্থী মারা যান।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, সেদিন বাস দুটির চালক ও চালকের সহকারীরা দুই থেকে তিনবার ওভারটেক করেন। জাবালে নূরের চালক মাসুম বিল্লাহ শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে বাসচাপায় মেরে ফেলার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, আগে গিয়ে যাত্রী তোলার জন্য বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে মেরে ফেলেছেন এবং অন্যদের আহত করেছেন।

বাসচাপার ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী মিমের বাবা জাহাঙ্গীর বাদী হয়ে যে ধারায় (দণ্ডবিধির ৩০৪-খ) মামলা করেন, তা ছিল বেপরোয়া যান চালিয়ে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগ। এই ধারার সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড। তবে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর ঢাকাসহ সারা দেশে ঘাতক বাসচালক ও চালকের সহকারীদের বিচার চেয়ে আন্দোলন শুরু হয়।

গত বছরের ১ আগস্ট পুলিশ মামলার ধারা সংশোধন চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করে। আদালতকে পুলিশ জানায়, তদন্ত করে দেখা গেছে, ঘটনার দিন বাসে ওঠার জন্য দাঁড়িয়ে ছিল ছাত্রছাত্রীরা। জখমের মাধ্যমে মৃত্যু হতে পারে জেনেও জাবালে নূর পরিবহনের বাসচালক, চালকের সহকারীরা তাঁদের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দিয়ে দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারার অপরাধ করেছেন। এ ধরার অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

সরকারি কৌঁসুলি(পিপি) তাপস কুমার পাল জানান, এই মামলায় মোট ৪১ জন সাক্ষীর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ৩৭ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করে। গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এর মধ্যে তিনজন ঢাকার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments