রাজশাহীতে বেড়েই চলেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। একই সাথে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। সবশেষে ৩৩১ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ায় বিভাগীয় শহর রাজশাহী এখন রেড জোনে। যে মানুষগুলো তবে উচ্চ ঝুঁকি বিবেচনায় কিছু এলাকা লকডাউনের কথা ভাবছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে প্রতিবেদন দিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক।
করোনার কমিউনিটি সংক্রমণ ঠেকাতে নমুনা পরীক্ষা বাড়ানোর দাবি উঠেছে রাজশাহীতে। রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. জামাত খান বলেন, নগরীতে আক্রান্তের হার যেমন বাড়ছে তেমনি মৃত্যুর হারও বাড়ছে। ফলে সন্দেহভাজনদের নমুনা পরীক্ষা বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। দ্রুত সময়ে এসব পদক্ষেপ না নিলে নগরীতে ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়বে করোনা।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, রাজশাহী নগরীতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। এই প্রবণতা খুবই আশঙ্কাজনক হলেও এখনই গোটা সিটিকে লকডাউন করা ঠিক হবে কি-না তা ভেবে দেখা হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব না মানা ও স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করা ছাড়াও বাইরে
থেকে আগতদের ঠিকমতো কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতে অবহেলার কারণেই রাজশাহীর এই পরিস্থিতি।
তিনি আরও বলেন, লকডাউন ঘোষণা করতে হলে বিবেচনা করতে হবে রোগীরা কোথায় আছেন, কোন পাড়া-মহল্লায় কতজন রোগী আছেন। দেখা যাচ্ছে, কোনো উপজেলায় ১৫ জন রোগী। কিন্তু তিনটি বাড়িতেই ১২ জন। তাহলে তিনটি বাড়ির জন্য গোটা এলাকা বা উপজেলা লকডাউনের প্রয়োজন হবে না। কারণ, ওই তিনটি বাড়িই তো লকডাউন আছে।
সিভিল সার্জন বলেন, রেড জোন এলাকায় লকডাউন বাস্তবায়ন করতে হলে পুরো সিটি কর্পোরেশন এলাকা লকডাউন করতে হবে। সেটি করা সম্ভব না। এজন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কোথায় কোথায় করোনা আক্রান্ত রোগী আছে সেটি খুঁজে বের করে তাদের একটি অংশ বা বাড়ি অথবা ১০টি পরিবার লকডাউন করলে বাকিরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে। এর মাধ্যমে সংক্রমণটিও আটকানো যাবে।
সিভিল সার্জনের দফতরের তথ্যানুযায়ী, ১২ মে পর্যন্ত রাজশাহী নগরী এলাকা করোনামুক্ত ছিল। যদিও জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ১২ এপ্রিল। সম্প্রতি নগরীতে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা সংক্রমণ। শনিবার (২৭ জুন) সকাল পর্যন্ত রাজশাহী জেলায় করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে ৪৭৪ জনের। এর মধ্যে ৩৩১ জনই রাজশাহী নগরীর বাসিন্দা।
ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিক করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রয়েছেন করোনা আক্রান্তদের তালিকায়। এ পর্যন্ত জেলায় করোনায় প্রাণ গেছে সাতজনের। যাদের তিনজনই রাজশাহী নগরীর বাসিন্দা। এদের মধ্যে একজন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন।
কমিউনিটি সংক্রমণের কারণেই বিশেষ শ্রেণির মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বলে মনে করছেন রাজশাহীর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. গোপেন্দ্র নাথ আচার্য্য। এই পরিস্থিতিতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ঈদের পর সব কিছু খুলে দেয়ায় পরিস্থিতি এখন প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সিটিকে লকডাউন করার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। দ্রুত সময়ে সিটিকে লকডাউন করা না হলে রাজশাহীতে করোনায় আক্রান্ত ও প্রাণহানি এড়ানো কঠিন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মেয়র।