Monday, September 15, 2025
Homeঅন্যান্যপৌনে তিন লাখ টাকায় এক কেজি আম! গাছ পাহারায় সশস্ত্র রক্ষী

পৌনে তিন লাখ টাকায় এক কেজি আম! গাছ পাহারায় সশস্ত্র রক্ষী

হাত নয়, এই আমের দামে পুরো শরীরই পুড়ে যাবে আম-আদমির। আমের নাম মিয়াজাকি। জাপানের প্রজাতি। এর একটি আমের ওজন ৩৫০ গ্রামের কম নয়। দু’টি আমের একটি বাক্সের দাম পড়তে পারে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। বিশেষজ্ঞদের বিচারে বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম এই মিয়াজাকিই। ১৯৭০-১৯৮০ সালের মাঝামাঝি জাপানে মিয়াজাকির ফলন শুরু হয়। জাপানে দামি উপহার হিসেবে দেওয়া হয় এই আম। টকটকে লাল রং, তাতে হালকা বেগুনি আভা। মিয়াজাকির তুলনা টানা হয় দামি পাথর চুনির সঙ্গে।

একে বিশালাকৃতি ডিম ভেবেও ভুল করতে পারেন আপনি। জাপানে অবশ্য একে আদর করে ‘তাইও-নো-তোমাগো’ অর্থাৎ ‘সূর্য কিরণের ডিম’ বলে ডাকা হয়।

হিমসাগর, চৌষা, দশেরী, ল্যাংড়া, আলফানসো আম বিদেশে একচেটিয়া রফতানি করে ভারত। তবে এ দেশেও মিয়াজাকি পাওয়া যায়।

মধ্যপ্রদেশের এক দম্পতির বাগানে মিয়াজাকি গাছ রয়েছে। তবে এই গাছ দু’টিই এখন তাঁদের যাবতীয় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।মাঝে মধ্যেই আম কিনতে চেয়ে প্রস্তাব আসছে তাঁদের কাছে। কেউ কেউ এর জন্য যে কোনও মূল্য দিতেও রাজি। এক গয়না ব্যবসায়ী এমন প্রস্তাব দিয়েছেন সম্প্রতি। যদিও ওই দম্পতি তাঁর প্রস্তাবে রাজি হননি।

তাঁরা জানিয়েছেন, এই আম কাউকে বিক্রি করবেন না তাঁরা। বরং আমের বীজ থেকে গাছের সংখ্যা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে তাঁদের। এমনকি গাছ থেকে যাতে কেউ আম চুরিও না করতে পারে, তার জন্য রক্ষী রেখেছেন মধ্যপ্রদেশের ওই দম্পতি। চার জন সশস্ত্র পাহারাদার এবং ছ’টি কুকুর দিনরাত পাহারা দেয় ওই আমগাছ। অবশ্য এই আমের নাম যে মিয়াজাকি এবং তা যে বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম, সে ব্যাপারে বছর খানেক আগেও কোনও ধারণা ছিল না তাঁদের।

জব্বলপুরের ওই দম্পতি রানি এবং সঙ্কল্প পরিহার এক সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, বেশ কয়েক বছর আগে সাধারণ আম গাছ ভেবেই দু’টি চারা পুঁতেছিলেন বাগানে।

চেন্নাইয়ে নিজের বাগানের জন্য গাছের চারা কিনতে গিয়েছিলেন সঙ্কল্প। ট্রেনে তাঁকে গাছ দু’টি দেন এক ব্যক্তি। তাঁর কথায়, ‘‘চারাগাছ দু’টি দিয়ে লোকটি বলেছিল, এদের নিজের সন্তানের মতো যত্ন কোরো।’’পরে গাছের ফল আর তার অদ্ভুত রং দেখে অবাক হন দু’জনেই। সঙ্কল্পের কথায়, ‘‘আমার চেনা কোনও আমের প্রজাতি যে নয় সেটা বুঝেছিলাম। মায়ের নামে ওই আমের নাম রেখেছিলাম ‘দামিনী’।’’দামিনী যে জাপানের মিয়াজাকি তা সঙ্কল্পরা জানতে পারেন কিছু দিন পরে। তত দিনে আম কিনতে চেয়ে, গাছ ভাড়া নিতে চেয়ে একের পর এক প্রস্তাব আসতে শুরু করেছে তাঁদের কাছে। কেউ একটা আমের জন্য ২১ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে চেয়েছেন। কারও আবার দামের পরোয়া নেই, যত চাই তত দিতে প্রস্তুত।

বিরল আম! এলাকায় তার খবর ছড়াতে দেরি হয়নি। ফল চুরির চেষ্টাও হয়েছে বেশ কয়েক বার। বাধ্য হয়েই গাছ পাহারার ব্যবস্থা করেন রানি এবং সঙ্কল্প। পরে মধ্যপ্রদেশের কৃষি দফতরের তরফেও যোগাযোগ করা হয় ওই দম্পতির সঙ্গে। মধ্যপ্রদেশের কৃষি দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা আর এস কাটারা সঙ্কল্পদের বাগান ঘুরে গাছ পরীক্ষা করে যান। তবে তাঁর কথায়, ‘‘এই আমের এত দামের কারণ এটির উৎপাদন অত্যন্ত কম বলে।’’ ভারতে এই আমের চাষ বাড়ানোর কথাও বলেছেন কাটারা। তবে তার আগে এই আম সত্যিই মিয়াজাকি কি না তা পরখ করতে দেখতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

মধ্যপ্রদেশের কৃষি দফতরের প্রাক্তন অধিকর্তা জি এস কৌশল জানিয়েছেন, এর আগে আফগানিস্তানের নুরজাহান আম শিরোনামে এসেছিল তার দামের জন্য। মিয়াজাকির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এই আম তার গুণ বা স্বাদের জন্য নয় দামের জন্য চর্চার কেন্দ্রে। নুরজাহানের এক একটি আমের দাম ছিল ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। মিয়াজাকির দর অবশ্য তার থেকে অনেকটাই বেশি।

\

যদিও কৌশলের কথায়, মধ্যপ্রদেশের আমটি সঠিক অর্থেই মিয়াজাকি না কি কোনও শঙ্কর প্রজাতির তা আগে খতিয়ে দেখা দরকার। আম বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করলে তবেই বৃহত্তর ক্ষেত্রে তা চাষের ব্যাপারে ভাবতে পারে সরকার।

জব্বলপুরের জওহরলাল নেহরু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই এই আম নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে।

তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, মিয়াজাকি আম ফলনের অনুকূল আবহাওয়া ভারতে আছে। তাই এই আম ভারতে হওয়া অস্বাভাবিক নয়।

জাপান ছাড়াও ফিলিপিন্স এবং তাইল্যান্ডে এই আমের চাষ হয়। আম চাষের জন্য দরকার প্রচুর রোদ, উষ্ণ আবহাওয়া আর নির্দিষ্ট পরিমাণ বৃষ্টি।

রোদের তাপ যাতে আমের চারপাশে সমান ভাবে পড়ে তার জন্য জাল দিয়ে মুড়ে রাখা হয় আমগুলিকে।মিয়াজাকির মিষ্টি স্বাদ অন্য আমের তূলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। এমনকি অ্যান্টি অক্সিড্যান্টের পরিমাণও অন্যান্য আমের চেয়ে অনেক বেশি।বিটা ক্যারোটিন এবং ফলিক অ্যাসিডে ঠাসা এই আম দৃষ্টিশক্তির জন্যও ভাল। বিশেষজ্ঞদের মতে তা ক্যানসারেরও ঝুঁকি কমায়। কোলেস্টেরল কমায় এমনকি ত্বকের জন্যও উপকারী।

এপ্রিল থেকে অগস্ট মাসে ফলন হয় এই আমের। এক একটি আম ৮৬০০ টাকা থেকে শুরু। দু’টো আমের বাক্স গত বছর আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি হয়েছিল ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকায়। ২০১৬ সালে নিলামে দু’টি মিয়াজাকি আম বিক্রি হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ টাকায়।

সম্প্রতি বাংলাদেশের ঢাকাতেও ছাদের বাগানে এই আম ফলিয়েছেন এক ব্যবসায়ী। সূত্রঃ আনন্দবাজার অনলাইন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments