রাজধানীর গাবতলীতে পুলিশের চেকপোস্ট উপেক্ষা করেই একটি মিনি ট্রাক ১৫ জন নারী-পুরুষ ও শিশু নিয়ে আমিন বাজার ব্রিজ পার হয়ে হয়ে চলে গেল। মানুষের সঙ্গে নানান রকমের মাল সামানাও ছিল। লকডাউন দীর্ঘমেয়াদি হলে নিম্নের সব মানুষের কাজ থাকবে না। তখন তারা অনেক অসুবিধায় পড়বেন তাই সবকিছু নিয়েই বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। পুলিশ তাদেরকে কিছুই বলেনি। পণ্যবাহী মিনি ট্রাকটি মানুষ নিয়ে সোজা পাটুরিয়ার দিকে চলে যায়। এভাবে বিভিন্ন পথে ছোট ছোট যানবাহনে অসংখ্য মানুষ আজ সকাল থেকেই ঢাকা ছাড়তে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
রবিবার (২৭ জুন) রাজধানীর গাবতলী, উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এবং পুরান ঢাকা বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায় ঢাকা ছাড়তে মানুষের চাপ গত কয়দিনে তুলনায় আরো অনেক বেড়েছে। আজ সকাল থেকে ফেরিগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। বিশেষ করে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে যাত্রীর চাপ সামলাতে বিআইডব্লিউটিসি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

আবুল হোসেন নামের এক চালক জানান, জনপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় মাইক্রোবাসগুলো যাত্রী পরিবহন করছে। ট্রাকগুলোতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় শিমুলিয়া ঘাটে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রীরা এই ঘাট ব্যবহার করে গ্রামের বাড়িতে যায়। এ কারণে আজ সকাল থেকে শিমুলিয়া ঘাটের উপর চাপ বেড়েছে। দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যাত্রীদের বিরত রাখতে পারছেন না।
সকাল পৌনে এগারোটার দিকে গাবতলী এলাকায় ঢাকার বাইরে যাওয়া মানুষের প্রবল ভিড় দেখা যায়। গাবতলীতে নেমেই বেশিরভাগ যাত্রী ব্রিজ পার হয়ে প্রায় এক কিলোমিটার পায়ে হেঁটে আমিনবাজারে গিয়েই যে যেভাবে পারছে, নানান ধরনের যানবাহন নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছে। আমিনবাজারের এই সড়কে মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার ও ছোট ছোট পণ্যবাহী যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকা দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
বিভিন্ন রুটের গাড়ি ধরিয়ে দিতে এখানে দালাল শ্রেণির তৎপরতা শুরু হয়েছে। যারা বিভিন্ন গণপরিবহনে কাজ করতেন দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় তারাই এখন ছোট পরিবহনে যাত্রীদের জন্য দালালি শুরু করেছে। এসব দালালরা গাবতলী থেকে পায়ে হেঁটে যাওয়ার পথে যাত্রীদের সঙ্গে দরদাম শুরু করেন।
দালাল মোশারফ হোসেন জানান, মাইক্রোবাসগুলো রাজশাহীসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে দেয়ার দিতে জনপ্রতি ১৪’শ থেকে ১৬’শ টাকায় যাত্রী নিয়েছে। পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত মোটরসাইকেলে যেতে লাগছে ১০০০ টাকা। একজন যাত্রী গাড়িতে তুলে দিতে পারলে তিনি ১০০ টাকা কমিশন পেয়ে থাকেন। দূরপাল্লার বাস না চলায় তিনি বেকার হয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে তিনি এভাবেই যাত্রী ধরার কাজ করছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকা থেকেই গত কয়েক দিনে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। কিন্তু আজ থেকে মাতুয়াইল ও সাইনবোর্ডের মাঝামাঝি জায়গায় পুলিশ নতুন করে চেকপোস্ট বসিয়েছে। এখান থেকেই যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ঢাকার বাইরে থেকে আসা যাত্রীবাহী কোন পরিবহন দেখতে পেলেই তাদেরকে ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও পুলিশের সামনে দিয়েই মাইক্রোবাস প্রাইভেটকার ও পণ্যবাহী যানবাহন মানুষ ঢাকা ছাড়ছে।
ঢাকা মাওয়া সড়কে আজ সকাল থেকেই যানবাহন এবং যাত্রীর চাপ প্রবলভাবে বেড়েছে। পায়ে হেঁটে আবার যানবাহনের মানুষ শিমুলিয়া ঘাটের দিকে ছুটছে। ব্রিজ পার হয়ে কেরানীগঞ্জের কদমতলা মোড় থেকেই সিএনজি মাইক্রোবাস ও পণ্যবাহী ট্রাকে লোকজন শিমুলিয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছে।
পুলিশ সদস্য শাহ আলম জানিয়েছেন, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ এর দায়িত্ব আমাদের দেয়া হয়েছে, আমরা নিয়ন্ত্রণে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আজ ভোর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন এবং যাত্রীর চাপ গত কয়েক দিনের তুলনায় অনেক বেড়েছে।
এদিকে আজ রবিবার ভোর থেকে শিমুলিয়া ফেরিঘাট এলাকায় হাজার হাজার যাত্রীর ভিড় হয়েছে। যাত্রীর চাপে শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজারমুখী ফেরিগুলোতে পণ্যবাহী ও জরুরি যানবাহন পারাপারে ফেরি কর্তৃপক্ষের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। ১৪টি ফেরি চলাচল করার পরও আজ ভোর থেকে পণ্যবাহী ও জরুরি পরিবহনগুলো যথাযথভাবে পার করা সম্ভব হচ্ছে না। যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি ফেরি যাত্রীতে পরিপূর্ণ অবস্থায় চলাচল করছে। এ কারণে শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় কয়েকশো ছোট-বড় যানবাহন আটকা পড়েছে।
লোকজন বিভিন্ন দিক থেকে এসে ঘাট এলাকায় উপস্থিত হচ্ছেন। ঘাটে পণ্যবাহী ও ব্যক্তিগত গাড়ির দীর্ঘ সারি। শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজারগামী প্রতিটি ফেরিতে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। এখানে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব। অনেকের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।
অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সাফায়েত আহমেদ বলেন, ১৪টি ফেরি চলাচল করছে। সকাল থেকে যাত্রীদের ভিড় রয়েছে। মানুষ নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের দায়িত্ব না। যারা ফ্রিতে উঠছে আমরা তাদেরকে পার করতে বাধ্য হচ্ছি।
তবে পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রীর চাপ কিছুটা কম রয়েছে বলে জানা গেছে। ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। তবে শিমুলিয়া ঘাটের মতো যাত্রীর চাপ অতটা নেই। সূত্রঃ ভোরের কাগজ।