Tuesday, September 16, 2025
Homeসারাদেশরাজশাহীরাজশাহীর 'সিডিএম হাসপাতালে' ৪৮ জন রাশিয়ান করোনা রোগী চিকিৎসাধীন

রাজশাহীর ‘সিডিএম হাসপাতালে’ ৪৮ জন রাশিয়ান করোনা রোগী চিকিৎসাধীন

যে সময় সারাদেশে আশঙ্কাজনক হারে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে, দীর্ঘ হচ্ছে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর তালিকাও। দেশের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে সরকারী হাসপাতাল গুলোতেও নেই পর্যাপ্ত আইসিইউ। যেখানে আইসিইউ আছে তারও অর্ধেক বিকল। ফলে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ভিড় করছে ঢাকার বাইরের করোনা আক্রান্ত রোগীরা।

অতিরিক্ত রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছে রাজধানীর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দেশের একমাত্র ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে ৭০ ভাগ রোগীই ঢাকার বাইরের। এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজেরও একই অবস্থা।

এমন অবস্থার প্রেক্ষাপটে ব্যাতিক্রমী ভূমিকায় রাজশাহীর একমাত্র সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত বেসরকারী সিডিএম হাসপাতাল। এই হাসপাতালে বর্তমানে ৪৮ জন রাশিয়ান নাগরিক করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। রাশিয়ান ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলার আরো ৩০ জন করোনারোগীও  চিকিৎসাধীন আছেন হাসপাতালটিতে। পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরের পদ্মার তীরে দেশের প্রথম পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে রাশিয়ান রাষ্ট্রীয় পারমানবিক শক্তি কর্পোরেশন। চিকিৎসাধীন রাশিয়ান নাগরিকেরা এই পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত আছেন।

হাসপাতালের প্রধান প্রবেশদ্বার ও কিডনী ডায়ালাইসিস ইউনিট। ছবিঃ সচেতন বার্তা।

গত ১৪ ই জুলাই (বুধবার) দুপুরের পর রাজশাহী নগরীর লক্ষীপুরে অবস্থিত এই হাসপাতালের সরেজমিন চিত্রে, পরিচ্ছন্ন পরিবেশে নিরাপদ পোশাক পরিহিত চিকিৎসক ও সেবিকাগণের সেবাদানের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত। ৮৫ শয্যাবিশিষ্ঠ এই হাসপাতালটি কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। নিজস্ব পাওয়ার হাউস ছাড়াও আছে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির জেনারেটর। আইসিইউ, সিসিইউ, এনআইসিইউ ছাড়াও হাসপাতালটিতে রয়েছে স্বয়ংক্রিয় আধুনিক পদ্ধতির কিডনী ডায়ালাইসিস ইউনিট। ডেন্টাল ও আউটডোর ইউনিটের পাশাপাশি হাসপাতালটিতে নাক, কান ও গলার লেজার সার্জারীর জন্য রয়েছে বিশেষায়িত অপারেশান থিয়েটার।

হাসপাতালটির একজন পরিচালক শামীমা চৌধুরী পলি। সচেতন বার্তার এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয়  পরিচালক শামীমা চৌধুরীর। তিনি দৈনিক সচেতন বার্তার এই প্রতিবেদককে আনন্দের সাথে জানান যে, “হাসপাতালের অন্যতম সাফল্য, প্রানঘাতী এই করোনাভাইরাস সেখানে চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত একজন রোগীরও  প্রান কাড়তে পারেনি। শতভাগ করোনা রোগীই সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিউরেছেন।”  তিনি বলেন, দেশের রোগীতো আছেই কিন্তু এ পর্যন্ত প্রায় দুইশত রাশিয়ান নাগরিক তাদের হাসপাতাল থেকে সেবা নিয়ে সুস্থ্য হয়ে ফিরেছেন।

সেইসাথে হাসপাতালটির এই পরিচালক দুক্ষ ভারাক্রান্ত ভাবে বলেন, এই মহামারী করোনাভাইরাসের শুরু থেকে তাদের প্রতিষ্ঠান সেবার বিনিময়ে কোনই মুনাফা অর্জন করতে পারেনি। তবে তিনি এ কথাও জানান যে, করোনাকালীন এই সময়ে কর্মহীন মানুষের দুর্দশাগ্রস্থ্য অবস্থায় তাদের প্রতিষ্ঠান মুনাফার কথা চিন্তাও করেননি। সেবার ব্রত নিয়েই শ্রম দিয়ে চলেছেন তারা। কিন্তু উনার দুক্ষ্ ভারাক্রান্তের কারণটা এখানেই যে, তাদের হাসপাতাল এভাবে বিদেশি, দেশিসহ করোনা আক্রান্ত নাগরিকদের সেবা দিয়ে আসছেন তারা অথচ আজ পর্যন্ত সরকারের কোন দপ্তর থেকে কেউ তাদের পাশে দাঁড়ানো দুরের কথা খোঁজ টুকুও নেননি।

হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিটের চিত্র। ছবিঃ সচেতন বার্তা।

 

পরিচালক শামীমা চৌধুরী তার কথার মধ্যে এই প্রতিবেদককেও একহাত নিতে ছাড়েননি। অভিমানের সুরেই বলেছেন, ‘এই যে আপনারা (গণমাধ্যম) এতদিনে জানতে এলেন। আজ যদি একটু কোন ভূলের কারণে কোন অঘটন হতো কিংবা কেউ মারা যেত তাহলে তো আপনাদের ক্যামেরার ফ্ল্যাশ লাইটেই বিল্ডিং জ্বলত, বিদ্যুৎ খরচ করে আমাদের লাইট জালানোর দরকারই হতো না’।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত প্রায় শতভাগ রোগীকেই ভর্তি হওয়ার সাথে সাথেই অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। সেকারণে অক্সিজেন এর অভাবে যাতে কোন প্রানহানী না ঘটে সেদিকে তারা সর্বোচ্চ লক্ষ্য রেখে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা, কর্মচারীদের নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন। রাজশাহীতে চলছে অক্সিজেন সংকট। যারফলে বগুড়া থেকে অক্সিজেন আনতে একদিকে বাড়তি গাড়িভাড়া, অপরদিকে চড়া মূল্য দিয়ে অক্সিজেন কিনতে হচ্ছে। অক্সিজেন সংকটের বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুনাফা দুরের কথা আর্থিক ঘাটতিতে থেকেই তাদের প্রতিষ্ঠান করোনায় আক্রান্তদের সেবা প্রদান করছেন।

সিডিএম হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা সূত্রে জানা যায়, ডাঃ কর্টন ও ডাঃ বাসেত এর নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ  চিকিৎসকগণ করোনা ইউনিটের রোগীদের সেবা প্রদান করছেন। দুই শিফটে ডাঃ নাজিয়া আফরিন, ডাঃ মাহফুজুর রহমান, ডাঃ শারমিন, ডাঃ হাসিবুলসহ বিশ জন ডাক্তার সার্বক্ষনিক দায়িত্বে থাকেন। তারা প্রতিদিন সময়ে সময়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণের সাথে ভার্চুয়াল কনফারেন্স  এর মাধ্যমে চিকিৎসা সহযোগীতা নিচ্ছেন।

অপরদিকে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ডাঃ কিরিল, ডাঃ জিহাদ সহ কয়েকজন চিকিৎসক সিডিএম হাসপাতালের সার্বক্ষনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিতসক গণের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে তাদের প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসাধীন রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের বিষয়ে নজরদারী করছেন।

সিডিএম হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিতসারত রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের রাশিয়ান নাগরিকদের সম্পর্কে জানতে দৈনিক সচেতন বার্তার প্রতিনিধি মোবাইলে কথা বলেন রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডাঃ জাহিদের সাথে। ডাঃ জাহিদ জানান তাদের প্রতিষ্ঠানের রাশিয়ান নাগরিক যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত তাদের চিকিতসার জন্য উত্তরবঙ্গে রাজশাহীর সিডিএম হাসপাতাল এবং ঢাকা ছাড়া অন্য কোথাও চিকিৎসার অনুমতি নাই। জানতে চাইলে, তিনি সিডিএম হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মানের বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

সিডিএম হাসপাতালে বিপুল সংখ্যক বিদেশী নাগরিকসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা করোনা রোগীদের সেবার বিষয়টি নগরীর সাধারণ মানুষের মুখেও বেশ প্রশংসিত শোনা যাচ্ছে। তবে এই বিপুল সংখ্যক বিদেশী নাগরিকগণের নিরাপত্তা বিধানে পুলিশ প্রশাসনের কোন সদস্যের উপস্থিতি চোখে পড়েনি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments