Monday, September 15, 2025
Homeঢাকাগাজীপুরছাত্রদলের কমিটি বাণিজ্য যৌতুকের টাকায়!

ছাত্রদলের কমিটি বাণিজ্য যৌতুকের টাকায়!

বিতর্ক থেকে বের হতে পারছে না বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সংগঠনের কতিপয় নেতার বিরুদ্ধে পাহাড়সম অভিযোগ উঠলেও লবিং-তদবিরে পার পেয়ে যাচ্ছেন তারা। এর মধ্যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় দুই-একজন নেতার বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে কমিটি গঠন, নারী কেলেঙ্কারির মতো গুরুতর অভিযোগও উঠেছে। এসব নেতাদের কারণে সারাদেশে ত্যাগী ও যোগ্য নেতারা যেমন মূল্যায়িত হচ্ছে না তেমনি অযোগ্যদের দিয়ে সংগঠনের ব্যর্থতার পাল্লা ভারী করা হচ্ছে।

ছাত্রদল নেতাকর্মীরা জানান, দীর্ঘ ২৭ বছর পর ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ফজলুর রহমান খোকন ও ইকবাল হোসেন শ্যামল। তাদের নেতৃত্বেই হয় ৬০ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। মেয়াদ শেষ হতে চললেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেননি তারা। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে পদ দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে অসংখ্য। এমন কেলেঙ্কারির কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে বিএনপির হাইকমান্ড।

নেতাকর্মীরা জানান, বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেয়ার পর সারাদেশে থানা, পৌর ও জেলা কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে। এসব কমিটি গঠন নিয়ে মাঠপর্যায়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এমনকি দলের সিনিয়র নেতারাও দলের হাইকমান্ডকে অভিযোগ দিয়ে আসছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেসব অভিযোগ আমলে নেয়নি দলের শীর্ষনেতারা। যার কারণে একের পর এক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ছে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ ছাত্র সংগঠনটি।

নেতাকর্মীরা জানান, কিছুদিন আগেও ছাত্রদলের দুই শীর্ষনেতা কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন ও ইকবাল হোসেন শ্যামলের বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যের আর্থিক লেনদেনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এবারো সংগঠনের দুই নেতার বিরুদ্ধে সাড়ে সাত লাখ টাকার বিনিময়ে একটি পদ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। যার সিংহভাগ টাকা পদ প্রত্যাশী নেতা তার স্ত্রী কাছ থেকে যৌতুক হিসেবে নিয়েছেন।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত বছরের ৮ নভেম্বর গাজীপুর সদর থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটির সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম বিবাহিত। কিন্তু সেই তথ্যকে ধামাচাপা দিয়ে গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সম্রাট ভূঁইয়ার সাথে যোগসূত্র করে রবিউলকে সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে আসেন ছাত্রদলের শীর্ষ এই দুই নেতা। এর জন্য আর্থিক লেনদেন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রবিউলের স্ত্রী মৌসি আক্তারের। অর্থের বিনিময়ে অযোগ্যদের পদায়নের জন্য যোগ্যদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে।

বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, এই আসনটি বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনের। কমিটি গঠনে তিনি ছাত্রদলের নেতা জাহাঙ্গীর সিকদারের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু সাবেক এই ছাত্রদল নেতার পছন্দকে অগ্রাহ্য করে ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি অনিয়ম করে এ কমিটি গঠন করেছে।

রবিউলের স্ত্রী মৌসি আক্তার জানান, ছাত্রদলের ওই দুই নেতাকে টাকা দিতে হবে বলে তার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা যৌতুক নিয়েছেন রবিউল ইসলাম। এর আগেও দফায় দফায় ছাত্রদলের নেতাদের খুশি করতে হবে, কমিটিতে আসতে হবে বলে আরো সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা নিয়েছেন রবিউল। সর্বশেষ আরো আড়াই লাখ টাকা ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দিতে হবে বলে আবারো টাকার জন্য চাপ দিলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।

এতে শশুরবাড়ির লোকজন তাকে মানসিক ও শারীরিক ভাবে নির্যাতন করেন বলে মৌসি আক্তার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে রবিউলসহ তার শশুর ইমান হোসেন, শাশুড়ি রুবিনা আক্তারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ সরকার শালিসের জন্য গত ১২ আগস্ট দুই পক্ষকে সমন নোটিশ দেন। নোটিশে গত ১৭ আগস্ট তাদেরকে ইউপি কার্যালয়ে হাজির হতে নির্দেশ বলা হয়।

মৌসি আক্তার জানান, ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার দুই মাস আগে সামাজিকভাকে তাদের বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই কমিটিতে পদ নিতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের টাকা দিতে হবে বলে সে আমাকে বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দিতে থাকে। এর প্রেক্ষিতে দুই লাখ টাকা তাকে দেয়া হয়। সেই টাকা কেন্দ্রীয় নেতাদের দেয়া হয়েছে বলেই জানি। কিন্তু তাদের টাকার চাহিদা অনেক। সেই টাকা আমার পক্ষে দেয়া সম্ভব না।

রবিউল টাকা কাকে দিয়েছেন জানতে চাইলে মৌসি বলেন, রবিউল আমাকে বলেছে ছাত্রদলের ওই দুই শীর্ষনেতাকে এ টাকা দিয়েছে। আমি ও আমার পরিবার আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। যেকোনো সময় আমাদের জীবননাশ হতে পারে। সবার কাছে বিচার চেয়েছি, কেউ সমাধান করেনি।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, বিবাহ, যৌতুক বিষয়টি নিয়ে যাতে বেশি জানাজানি না হয় সেজন্য তড়িঘড়ি করে রবিউল ইসলামের রাজনৈতিক অভিভাবক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইজাদুর রহমান মিলন মেয়ে পক্ষের সাথে আপোষ মীমাংসা করার উদ্যোগ নেন। এ প্রক্রিয়ায় বিগত দিনে যৌতুকের টাকা ফেরত দেয়ার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ হিসেবে আরো চার লাখ টাকা মেয়ে পক্ষকে দেয়ার ওয়াদা করানো হয়। কিন্তু সেই মীমাংসা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

এ বিষয়ে ইজাদুর রহমান মিলন বলেন, আমি দুই পক্ষকে নিয়ে বসেছিলাম। মৌখিক মীমাংসা করে দিয়েছি। এর বেশি কিছু আমি জানি না।

রবিউল ইসলামের শ্বশুর মফিজুল ইসলাম বলেন, ছেলের বাবা ইমান হোসেন ও আমি ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলাম। সেই সুবাদে তাদের সাথে আত্মীয়তা করি। কিন্তু যৌতুকের জন্য আমার মেয়ের সংসার ভেঙ্গেছে।

এ বিষয়ে গাজীপুর সদর থানা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ মাসুদ বলেন, দুই পরিবারের সম্মতিতে রবিউল ও মৌসির বিয়ে হয়। রবিউল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সম্রাট ভূঁইয়ার লোক। রবিউল একজন নেশাখোর ও বাটপার। তার জন্য সকলের কাছে আমাদের হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়েছে।

রবিউল কি কেন্দ্রীয় নেতাদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এ পদ পেয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদ মাসুদ বলেন, যেহেতু রবিউল জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সম্রাট ভূঁইয়া ব্লকের লোক তাই বিযয়টি তিনি বলতে পারবেন।

জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সম্রাট ভূঁইয়ার কাছে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলার সভাপতি হয়ে আমি থানা কমিটি করতে গিয়ে কোনো আর্থিক লেনদেন করিনি।

রবিউল পদ পেতে ছাত্রদলের শীর্ষনেতাদের কি মোটা অংকের টাকা দিয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কিছু জানি না। তবে উড়ো উড়ো শুনেছি। বিভিন্ন জন বলেছে। আমার সাধারণ সম্পাদকও বিভিন্ন বিষয় শুনেছেন।

বিভিন্ন অভিযোগের জবাবে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, মৌসি আক্তারের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। অবশ্যই তিনি নায্য বিচার পাবেন।

অভিযুক্ত রবিউল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করলেও ফোন ধরেননি তিনি। এসএমএস পাঠালোও কোনো জবাব দেননি রবিউল।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments