Monday, September 15, 2025
Homeজাতীয়গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া উচিত

গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া উচিত

যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত, ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হাডসন সেন্টারের পরিচালক হোসেন হাক্বানী বলেছেন, একাত্তরের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া উচিত। পাকিস্তানের অনেকে মনে করেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের ওপর বিয়োগান্তক যে ঘটনা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল তার জন্য পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া উচিত।

রোববার ঢাকায় দু’দিনের বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের সমাপনী দিন প্যানেল আলোচনায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অপকর্মের জন্য পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনার দাবিকে সমর্থন করতেন।

বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বঙ্গবন্ধু সমার্থক উল্লেখ করে হোসেন হাক্কানি বলেন, মহাত্মা গান্ধী ও নেলসন ম্যান্ডেলার মতো তিনিও জীবনের এক–পঞ্চমাংশ কাটিয়েছেন কারাগারে। তাকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বলা হয়। আমি মনে করি, তিনি দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা।

গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্জন অন্য দেশগুলোর জন্য মডেল। ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় আর্থসামাজিক নানা সূচকে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।

‘পিস থ্রো ইন্টার-ফেইথ ডায়ালগ, কালচার অ্যান্ড হেরিটেজ’ শিরোনামের প্যানেল আলোচনায় আরও অংশ নেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক মন্ত্রী হন ফিলিপ রুডক, সংযুক্ত আরব আমিরাতের গ্লোবাল কাউন্সিল ফর টলারেন্স অ্যান্ড পিসের প্রেসিডেন্ট আহমেদ মোহামেদ রশিদ আলজারওয়ান আলশামসি, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যারোলিনার সোহা ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. কারেন জুংব্লুট, এথেন্সের ন্যাশনাল অ্যান্ড কাপোডিস্ট্রিয়ান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র গ্রিস ভাষায় অনুবাদক দিমিত্রিওস ভাসিলিয়াডিস এবং পোল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারশর অধ্যাপক মিশাল পানাসিউক। সভা সঞ্চালনা করেন জেনেভায় ইউএন ইউনিভার্সিটি ফর পিস টু দ্য ইউএন অফিস অ্যান্ড আদার ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের স্থায়ী পর্যবেক্ষক ডেভিড ফার্নান্দেজ পুয়ানা।

‘পিস অ্যান্ড ইমার্জিং গ্লোবাল ট্রেন্ডস’ শিরোনামে দিনের দ্বিতীয় প্যানেল আলোচনা সঞ্চালনা করেন ইউনিভার্সিটি অব কলম্বোর উপাচার্য অধ্যাপক চন্দ্রিকা এন উজারটিন। আলোচনায় অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা এবং জর্জ ম্যাশন ইউনিভার্সিটির জেনোসাইড স্টাডিজের গবেষক অধ্যাপক গ্রেগরি স্ট্যানটন, মালয়েশিয়ার মালয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক রাজাহ রাইসা, কোস্টারিকার ইউনিভার্সিটি ফর পিসের রেক্টর ফ্রান্সিস্কো রোজা অ্যারাভিনা, ইন্দোনেশিয়ার সোসাইটি এগেইনস্ট র‌্যাডিকালিজম অ্যান্ড ভায়োলেন্ট এপট্রিমিজমের প্রতিষ্ঠাতা সিতি দারোজাতুল আলিয়া এবং চীনের তিসুংগুয়া ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর সাউথ এশিয়া বিভাগের পরিচালক ড. লি লি।

অষ্ট্রেলিয়ার সাবেক মন্ত্রী ফিলিপ রুডক বলেন, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে মানুষ ন্যায়বিচার ও সম অধিকারের জন্য লড়াই করে একটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে আসা বিপন্ন মানুষদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ আরও একবার মানবাধিকারের প্রতি দায়বদ্ধতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অধ্যাপক ড.কারেন জুংব্লুট বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার মনোভাব নিয়ে বিশ্বকে এগিয়ে যেতে হবে। নারীর প্রতি বৈষম্য রাখা যাবে না। গ্রিসের অধ্যাপক দিমিত্রিওস ভাসিলিয়াডিস বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী অনুবাদ করতে গিয়ে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন এই মহান নেতার মানুষের জন্য ভালবাসা ও শান্তির জন্য আকাংখা দেখে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিতে পারে বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।

অধ্যাপক গ্রেগরি স্ট্যানটন বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হচ্ছে গণহত্যা বন্ধ করতে ব্যর্থ হওয়া। তিনি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ১৯৪৫ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন যুদ্ধে প্রায় ৫ কোটি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আর ১০ কোটির বেশী মানুষ নিহত হয়েছেন বিভিন্ন সময়ের গণহত্যায়। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে সভ্যতার এত উৎকর্ষতার পরও যুদ্ধ, গণহত্যা কোনটিই বন্ধ হয়নি। বরং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য যুদ্ধ পরিচালনার মত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যেখানে জাতিসংঘের সাধারন পরিষদ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার নানা ইস্যুতে একটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে প্রায়ই ব্যর্থ হচ্ছে। বিশ্ব নেতৃত্বের এ ধরনের অবস্থার মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আশাবাদী হওয়ার সুযোগ কম। গণহত্যার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতেই হবে।

অধ্যাপক রাজাহ রাইসা বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর বিশ্ব ব্যবস্থায় মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশী কাছাকাছি, আবার একাকিত্বও বাড়ছে। এখন বড় সুযোগ আছে তথ্যপ্রযুক্তিতে ব্যবহার করে সমাজে অশান্তি সৃস্টির উপাদানগুলো সম্পর্কে সচেতন করে তোলার এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার।

কোস্টারিকার ফ্রান্সিস্কো রোজা অ্যারাভিনা বলেন, বিশ্বে সেদিনই শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে যেদিন প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মানুষ হত্যার ঘটনা আর ঘটবে না। তিনি বলেন, সভ্যতার একটা পর্যায়ে এসেও যখন প্রতিহিংসা প্রকাশ হিসেবে শারীরিক নির্যাতন চলে দেশে দেশে, তখন সেই মানব সভ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়ে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments