ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার জেরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর দেয়া নিষেধাজ্ঞার জের ও রাশিয়ার ব্যাংকগুলোকে সুইফট ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার আলোচনা শুরু হওয়ায় দেশটিতে তৈরি পোশাক রফতানি বন্ধ করে দিয়েছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, সুইফট থেকে রাশিয়ার ব্যাংকগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে তৈরি পোশাকের মূল্য পরিশোধে জটিলতা তৈরি হবে। এজন্য আগাম সতর্কতার অংশ হিসেবে রফতানি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি -বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে সদস্য কারখানা মালিকদের এ বিষয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সুইফট বন্ধের আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় রাশিয়ান ক্রেতাদের কাছ থেকে নতুন করে রফতানি অর্ডার যাতে না নেয়া হয় ।এছাড়া নতুন করে কোনো শিপমেন্টও হচ্ছে না বলে বিজিএমইএ সূত্র জানিয়েছে।
রাশিয়া বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের নতুন এবং সম্ভাবনাময় একটি বাজার। গত কয়েক বছর ধরে রাশিয়ায় পোশাক রফতানি বাড়ছে। ইউক্রেনেও বাংলাদেশ থেকে পোশাক রফতানি হয়।তবে রফতানির পরিমাণ কম।
সরাসরি এবং তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে রাশিয়ায় বছরে ১ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি হয়ে থাকে বলে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সংগঠনের সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম জানিয়েছেন, রাশিয়াতে সরাসরি সাড়ে ৬০০ মিলিয়ন ডলারের পোশাক যায় বাংলাদেশ থেকে। আর ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মাধ্যমে যায় আরো সাড়ে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের।সবমিলিয়ে অন্তত ১ বিলিয়ন ডলারের পোশাক যায় রাশিয়াতে।
সদস্য কারখানা মালিকদের রাশিয়ায় পণ্য না পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুদ্ধ এবং সম্ভাব্য সুইফট বন্ধের কারণে চালান পাঠানো ও পেমেন্ট পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো’র তথ্য অনুযায়ী গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত রাশিয়ায় রফতানি হয়েছে ৪১৫ দশমিক ৪৭ মিলিয়ন ডলারের পোশাক।যা গত বছরের তুলনায় ৩৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউজ এসোসিয়েশনের (বিজিবিএ) সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসেন জানিয়েছেন, রাশিয়ায় বাংলাদেশের পোশাকের বাজার খুব বড় না হলেও একেবারে কম না। কারণ সেখানে নিটওয়্যারের প্রচুর রফতানি আছে। রাশিয়ায় যাওয়ার জন্য ইউরোপের ট্রানজিট নিতে হয়। সেই ট্রানজিট যদি না হয় তাহলে পোশাক খাত হুমকির মুখে পড়বে। তিনি বলেন, ‘রাশিয়াতে তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে রপ্তানি করতে হয়।সুইফট যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে পেমেন্ট করা যাবে না।আর পেমেন্ট বন্ধ থাকলে রফতানি এমনিতেই বন্ধ করতে হবে।’
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র। বার্ষিক রফতানির ৬৪ শতাংশই যায় ইউরোপের দেশগুলোতে।
সূত্র : ভয়েস অফ আমেরিকা