Sunday, September 14, 2025
Homeআন্তর্জাতিকরাশিয়ার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সতর্কবার্তা

রাশিয়ার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সতর্কবার্তা

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার ‘বাস্তব’ ঝুঁকি নিয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘কিয়েভকে অস্ত্র দেওয়ার মাধ্যমে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধে অংশ নিচ্ছে ন্যাটো। এটি পারমাণবিক যুদ্ধের বাস্তব ও মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করেছে।’ খবর বিবিসির।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার জার্মানিতে ইউক্রেনকে ভারী যুদ্ধাস্ত্র সহায়তা দিতে সম্মেলনে বসছেন যুক্তরাষ্ট্রসহ ৪০টির বেশি দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। এ সম্মেলন সামনে রেখে ওই সতর্কবার্তা দেন শীর্ষ রুশ কূটনীতিক।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়ার গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ১৯৬২ সালে কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি তুলনীয় কিনা।

এ বিষয়ে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যে কোনো মূল্যে পরমাণু যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার নীতিতে অটল রাশিয়া। এটিই আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান। কিন্তু বর্তমানে যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, তা বিবেচনাযোগ্য। আমরা এসব ঝুঁকি কৃত্রিমভাবে বাড়াতে চাই না। কিন্তু অনেকেই তা চাচ্ছে। বিশ্ব মারাত্মক ও বাস্তব ঝুঁকিতে। এমন পরিস্থিতিকে আমরা হালকা করে দেখতে পারি না। তিনি আরও বলেন, ‘ন্যাটো মূলত একটি প্রক্সির মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত এবং সেই প্রক্সিকে অস্ত্র দিচ্ছে। যুদ্ধ মানে যুদ্ধ।’

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন জার্মানিতে যুক্তরাষ্ট্রের রামস্টেইন বিমান ঘাঁটিতে ৪০টির বেশি দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের নিয়ে সম্মেলন আহ্বান করেছেন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সহায়তা দিতে এ বৈঠকের ঘোষণা দেওয়ার পর ল্যাভরভ এভাবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে জার্মানি যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান মার্ক মিলেই। তিনি বলেন, ‘আগামী কয়েক সপ্তাহ খুব ভয়াবহ হবে। যুদ্ধে সফল হওয়ার জন্য তাদের (কিয়েভ) অব্যাহত সহায়তা দরকার। এই সম্মেলনের উদ্দেশ্যই এটি।’ তিনি আরও বলেন, ‘লক্ষ্য সমন্বিত সহায়তা- এগুলোর মধ্যে হাউজার কামান, স্টিংগার, কিলার ড্রোন, জ্যাভলিন ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবারুদ দেওয়া।’ এরই মধ্যে জার্মানি ঘোষণা দিয়েছে, তারা ইউক্রেনকে বিমানবিধ্বংসী ট্যাঙ্ক জেপার্ড দিচ্ছে। এ ছাড়া ফ্রান্স সিজার কামান এবং যুক্তরাজ্য বিমানবিধ্বংসী ট্যাঙ্ক ও ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে।

ইউক্রেনের বিদেশমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেন, ‘রাশিয়া বুঝে গেছে বিশ্ব কিয়েভকে সমর্থন করছে। মস্কো শেষ আশাও হারিয়েছে। এ কারণেই এখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিচ্ছে। মস্কো নিজেদের হার দেখতে পাচ্ছে। ভীতি প্রদর্শন হচ্ছে দুর্বলতার লক্ষণ। তাই বাকি বিশ্বের উচিত ইউক্রেনকে আরও বেশি করে সাহায্য করা। এতেই ইউরোপ ও বাকি বিশ্বের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে।’ যুক্তরাজ্য রাশিয়ার এ আশঙ্কা প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী জ্যামস হিয়্যাপি বলেন, ঠিক এখন যুদ্ধের আসন্ন হুমকি আছে বলে আমি মনে করি না।

প্রতিবেশী দেশে রাশিয়ার সামরিক অভিযান তৃতীয় মাসে গড়িয়েছে। ১৯৪৫ সালের পর ইউরোপীয় কোনো দেশে এটি সবচেয়ে বড় হামলা। এতে এখন পর্যন্ত হাজারো মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। ইউক্রেনের শহর ও নগরগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটিকে সহায়তা দ্বিগুণ করার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। মার্চে সংস্থাটি জানায়, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দরকার। গতকাল সংস্থাটি ২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তার আহ্বান জানায়। এ যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি অংশ না নিলেও পশ্চিমা বিশ্ব কিয়েভকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছে। শুরু থেকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বারবার ভারী অস্ত্রের আবেদন জানিয়ে আসছেন। বিষয়টিকে সামনে রেখে জার্মানিতে নিরাপত্তা সম্মেলন ডাকে যুক্তরাষ্ট্র।

কিয়েভকে যখন দীর্ঘমেয়াদি সামরিক অস্ত্র সহায়তার জন্য বৈঠক করছে পশ্চিমারা, ঠিক তার আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপ করেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ইউক্রেন সংকট নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও নবনির্বাচিত ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। তারা শিগগির বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন।

সুত্রঃ বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি ও দ্য ডনের।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments