Monday, September 15, 2025
Homeজাতীয়১৮০০ স্প্লিন্টার নিয়ে জীবন্ত লাশ, আর ভালো লাগে না

১৮০০ স্প্লিন্টার নিয়ে জীবন্ত লাশ, আর ভালো লাগে না

শরীরের এক হাজার ৮০০ স্প্লিন্টার নিয়ে আমি জীবন্ত এক লাশ। আর ভালো লাগে না। ধর্মীয়ভাবে নিষেধ না থাকলে হয়তো আত্মহত্যা করতাম।

গতকাল শনিবার এভাবে নিজের দুর্বিষহ জীবনের কথা তুলে ধরেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত মাহাবুবা পারভিন।

তিনি বলেন,‘রাতে ঘুমাতে পারি না,দিনেও না। ঘুমটা চোখে লাগলেই শরীরে সুচের মতো খোঁচা মারে স্প্লিন্টার। অনেক সময় রাতে উঠে গোসল করি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে কলকাতা থেকে উন্নত চিকিৎসা করিয়ে নিয়ে এসেছেন। ব্রেনের চিকিৎসা ব্যাংকক থেকে করাতে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। সেটা হয়ে ওঠেনি।’

কথার ফাঁকে অশ্রুসজল চোখে সেদিনের বেঁচে ফেরার ফ্রেমবন্দি ছবিগুলো বারবার দেখাচ্ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলার পর রক্তাক্ত মাহাবুবা পড়ে ছিলেন সড়কে। তাঁর পাশে তখন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ক্ষবিক্ষত আরো মানুষ।

মাহাবুবা বলেন,সেদিন কেউ ভাবেনি আমি বেঁচে আছি। ভ্যানে করে অন্য সবার সঙ্গে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আশীষ কুমার মজুমদারকে আমার পরিবারের সদস্যরা ফোন দেয়। তখন তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে গিয়ে আমার লাশের খোঁজ করছিলেন। পরে দেখেন, দ্বিতীয় তলায় ফ্লোরে শুয়ে আছি। কিন্তু স্প্লিন্টারে ক্ষতবিক্ষত। হাসপাতালে ভর্তি নিচ্ছিল না। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য কলকতার পিয়ারলেস হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসকরা জানান, মাথায় তিনটি স্প্লিন্টার আছে। শরীরে এক হাজার ৮০০টি। প্রধানমন্ত্রীর অসিলায় আমরা বেঁচে আছি।

তিনি বলেন,২০১৬ সালের নভেম্বরে স্বামী মারা যাওয়ার পর বড় ছেলে আমার সঙ্গে বসবাস করছে। ছোট ছেলে বিদেশে পড়ালেখা করছে। আমরা তিন বোন, চার ভাই। সাভারে আমার আশপাশে বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছে। আমার প্রয়োজন হলে তারা ছুটে আসে।

বর্তমানে সাভারের বাজার রোডে দোতলা বাড়িতে এক ছেলেকে নিয়ে বাস করছেন মাহাবুবা।

মাহাবুবা পারভিন বলেন,‘ভারত থেকে চিকিৎসা শেষে সুধা সদনে প্রধানমন্ত্রী আমাকে ডেকে পাঠান। আমার ভবিষ্যতের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন, আমার ছেলেদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন। নেত্রী সেই থেকে আমার চিকিৎসার খরচ দিয়ে আসছেন। এককালীন ১০ লাখ দেন। পরে আবার ১০ লাখ টাকার চেক দেন। মিরপুরে একটি ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছেন। মাসে ১০ হাজার টাকা খরচের জন্য দিচ্ছেন। এখন শাহবাগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি। বাসে যাতায়াত করতে পারি না। আমার নিজস্ব যাতায়াতব্যবস্থা নেই, বাসে যাতায়াতে খুব সমস্যা হয়।’

তিনি বলেন,আমি আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা জেলার মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা থাকা অবস্থায় হামলার শিকার হই। আমি একমাত্র মহিলা, যে সাভার থেকে ঢাকায় রাজনীতিতে ছোটাছুটি করেছি। কিন্তু আহত হওয়ার পর এত কষ্টে দিন কাটালেও স্থানীয় কোনো নেতাকর্মী আমার খোঁজখবর নেননি। সহযোগিতার হাত বাড়াননি।’

মাহাবুবা বলেন,প্রধানমন্ত্রী আমাকে বুকে টেনে নিয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের নাম করে কোনো সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করিনি।’

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments