Sunday, September 14, 2025
Homeস্বাস্থ্য ও জীবনহার্টের ধমনীতে ব্লক হয়,সমাধান কী?

হার্টের ধমনীতে ব্লক হয়,সমাধান কী?

ধমনীতে ব্লক নানা কারণে হয়ে থাকে। বুকের বাম পাশে এক ধরনের ব্যথা অনুভব হলে বুঝতে হবে হার্টে সমস্যা হয়েছে।হার্টের ধমনীতে ব্লক হওয়ার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবুল হাসান মুহম্মদ বাশার।

ব্লক কী-আমাদের সারা দেহে ছড়িয়ে আছে দুই ধরনের রক্তনালি- ধমনী ও শিরা। ধমনীর কাজ হল অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত হৃৎপিণ্ড থেকে সারা শরীরে ছড়িয়ে দেয়া। ধমনীর প্রবাহপথ কোন কারণে সরু বা বন্ধ হয়ে গেলে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়, এই বাধাকে বলে ‘ব্লক’ (ইষড়পশ)।

ইশ্কেমিক হার্ট ডিজিজ কী-হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীর নাম ‘করোনারি ধমনী’। এ করোনারি ধমনীতে ব্লক সৃষ্টি হলে তাকে বলে ‘ইশ্কেমিক হার্ট ডিজিজ’।

ব্লক কেন হয়-ধমনীতে ব্লকের মূল কারণ কোলেস্টেরল যা আমাদের প্রতিদিনের খাবারের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে এবং রক্তের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে ধমনীর ভেতরের গায়ে জমা হয়ে ব্লকের সৃষ্টি করে। কোলেস্টেরলই ব্লকের একমাত্র কারণ নয়। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং ধূমপানকেও বড় কারণগুলোর অন্যতম মনে করা হয়।

ব্লক কীভাবে বুঝবেন-করোনারি ধমনীতে ব্লক থাকলে নিচের উপসর্গগুলো দেখা যায়-বুকের বামপাশে বা মাঝখানে এক ধরনের ব্যথা বোধ হয়।অনেক সময় বাম হাতের ভেতরের দিকে অস্বস্তি বোধ হয়।নিচের চোয়ালে বা দাঁতের পাশেও এক ধরনের অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।প্রাথমিক অবস্থায় কেবল শারীরিক পরিশ্রমের সময় এই ব্যাথা অনুভূত হয় এবং বিশ্রাম নিলে কমে যায়। মনে রাখতে হবে যে, ব্লক থাকলেই যেসব সময় ব্যাথা হবে, এমন নয়।ব্লক থেকে হার্ট অ্যাটাক

ব্লক থাকলে নিয়মিত চিকিৎসা না নিলে তা হার্ট অ্যাটাকের দিকে মোড় নিতে পারে। হার্ট অ্যাটাকের ফলে হৃৎপেশি মারা যেতে শুরু করে বলে বুকে তীব্র ব্যথার সঙ্গে বমি ও প্রচুর ঘাম হয়। হার্ট অ্যাটাক ইশ্কেমিক হার্ট ডিজিজের খুবই মারাত্মক এক পরিণতি যা প্রায়ই রোগীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক-যারা দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় বুকে তীব্র ব্যথা, ঘাম, বমি- এসব লক্ষণ ছাড়াই হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। একে বলে ‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক’।

ব্লকের চিকিৎসায় কী করবেন-ব্লক যতই বিপজ্জনক হোক না কেন, জটিল আর দশটি রোগের মতো এরও চিকিৎসা রয়েছে, প্রাথমিক অবস্থায় ওষুধের মাধ্যমে ব্লকের চিকিৎসা সম্ভব। মারাত্মক ব্লকের ক্ষেত্রে প্রথমে অ্যানজিওগ্রাম পরীক্ষা করে ব্লকের স্থান ও তীব্রতা নির্ধারণ করতে হবে। তারপর সম্ভব হলে কাঁটাছেঁড়া ছাড়াই রিং বসিয়ে ব্লক দূর করার চেষ্টা করতে হবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এ পদ্ধতির নাম পারকিউটেনিয়াস করোনারি অ্যানজিওপ্লাস্টি সংক্ষেপে পিসিআই। ব্লক যদি সংখ্যায় বেশি হয়, রিং বসানো সুবিধাজনক নাও হতে পারে, সেক্ষেত্রে বাইপাস অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।

সুতরাং, হার্টকে ব্লকমুক্ত রাখতে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ ও ধূমপান পরিহার করা অত্যন্ত জরুরি। কাজটি খুব সহজ নয়। এজন্য চাই দৃঢ় মনোবল এবং জীবনাচরণে পরিবর্তন। পুরো ব্যাপারটা কঠিন মনে হলেও জীবনাচরণ সংক্রান্ত কিছু কাজ কিন্তু সহজেই সম্ভব। যেমন-শারীরিক পরিশ্রম বাড়ানো

বাংলাদেশ যত নগরকেন্দ্রিক হচ্ছে, শহুরে লোকজন তত মানসিক যোগ্যতা নির্ভর হয়ে উঠছেন। তারা যতটা মাথা খাটাচ্ছেন, শরীর ততটা না। ফলে শরীর হয়ে পড়ছে নিষ্ক্রিয়। অথচ, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও উচ্চ কোলেস্টেরলের ঝুঁকি কমায়।লিফট কম ব্যবহার করুন

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা কিংবা জগিংয়ের অভ্যাস করুন। যারা হাঁটার সময় বের করতে পারেন না, তারা কাছের দূরত্বগুলো যানবাহন ব্যবহার না করে পায়ে হেঁটে যান। যতটা সম্ভব লিফটে না চড়ে সিঁড়ি ব্যবহার করুন।

ক্যালরির হিসাব রাখুন-খাবারের মাধ্যমে প্রতিদিন যে পরিমাণ ক্যালরি আপনি গ্রহণ করছেন, সেই পরিমাণ ক্যালরি যদি খরচ না হয়, তাহলে বাড়তি ক্যালরি রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ওজন বাড়িয়ে আপনাকে ডায়াবেটিস ও ইশ্কেমিক হার্ট ডিজিজের দিকে ঠেলে দেবে। এজন্য প্রতিদিন খাবারের মাধ্যমে গৃহিত ক্যালরি ও এর ব্যয় সম্পর্কে একটা মোটামুটি ধারণা মাথায় রাখা ভালো।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

ইশ্কেমিক হার্ট ডিজিজের ঝুঁকি কমাতে নিচের খাবারগুলো আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।

-টাটকা শাকসব্জি, ফলমূল

-মাছ- বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ

-বিভিন্ন ধরনের বাদাম (নাটস্), শিম, মটরশুঁটি

-সয়াজাত খাবার যেমন-তফু

-রসুন

-ননিমুক্ত দুধ, পনির

কিছু খাবার পরিহার করাও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের অংশ। এ ধরনের কিছু খাবার হল;

-অতিরিক্ত লবণ

-লাল মাংস ও অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত মাংস যেমন- গরু, খাসি, হাঁস ইত্যাদি

-মাংসের ওপরের চামড়া

-মাখন

-অধিকাংশ কোমল পানীয়

দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ আপনার রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে ইশ্কেমিক হার্ট ডিজিজের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। সুতরাং যতটা সম্ভব মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। বুক ভরে শ্বাস নিন এবং সুযোগ পেলেই হাসুন, প্রাণখুলে। মানসিক প্রশান্তির জন্য নামাজ, প্রার্থনা, মেডিটেশন এসবের সাহায্যও নিতে পারেন।

নিয়মিত চেক-আপ

হার্টের ব্লক সাধারণত বয়স্কদের রোগ হলেও ইদানীং অল্প বয়সেও এ রোগ দেখা যাচ্ছে। তাই ব্লকজনিত হৃদরোগ বা ইশ্কেমিক হার্ট ডিজিজ প্রতিরোধে ৪০ বছর বয়সের পর নিয়মিত চেক-আপ করানো ভালো।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments