Sunday, September 14, 2025
Homeজাতীয়বানিজ্যশেয়ার কারসাজি তদন্তে সাকিবের নামও

শেয়ার কারসাজি তদন্তে সাকিবের নামও

শেয়ারবাজারের আলোচিত বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের হিরোর কারসাজি তদন্তে বেরিয়ে এসেছে ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসানের কম্পানিসহ ১৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম। সাতটি কম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল টাকা তুলে নেয় তারা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তদন্ত প্রতিবেদনে সাকিবের কম্পানি মোনার্ক হোল্ডিংসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে কারসাজির অভিযোগ আনা হয়েছে এবং জরিমানা করা হয়েছে। সাকিব ওই কম্পানির চেয়ারম্যান।

পুঁজিবাজারে কারসাজির ঘটনায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বিভিন্ন তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, হিরো ও তার পরিবারের সদস্যরা যেসব শেয়ার নিয়ে কারসাজি করেছেন সেসব শেয়ারে একই সময়ে সাকিব আল হাসান বিপুল অংকের বিনিয়োগ করেছেন। ২০২১ সালের ৫ মে থেকে চলতি বছরের ১০ মার্চ পর্যন্ত হিরো গংয়ের চারটি কারসাজির ঘটনা তদন্তে সংশ্লিষ্ট শেয়ারগুলোতে সাকিবের বড় অংকের বিনিয়োগের বিষয়টি উঠে আসে। শেয়ারগুলো হচ্ছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, ফরচুন সুজ, ওয়ান ব্যাংক ও বিডিকম অনলাইন লিমিটেড। এসব শেয়ারের প্রতিটিতে কারসাজি চলাকালীন সাকিব আল হাসান নিজ নামের বিও হিসাবে অথবা তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংসের নামে বিপুল পরিমাণের শেয়ার লেনদেন করেছেন।

আলোচিত হিরোর স্ত্রীর কাজী সাদিয়া হাসানের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে শেয়ার কেনাবেচার ব্রোকারেজ হাউসের মালিকানায় রয়েছেন সাকিব আল হাসান। মোনার্ক হোল্ডিংসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সাদিয়া হাসান আর এর চেয়ারম্যান ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। সাদিয়া হাসানও কারসাজির দায়ে অভিযুক্ত।

তদন্ত প্রতিবেদনে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের শীর্ষ ক্রেতাদের মধ্যে সাকিব আল হাসানের নামও আছে। তবে তিনি এই শেয়ার কিনেছেন অন্য একটি ব্রেকারেজ হাউস থেকে।

যে সাত কম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি হয়েছে সেগুলো হলো ওয়ান ব্যাংক, বিডিকম অনলাইন, ফরচুন সুজ, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, এশিয়া ইনস্যুরেন্স, গ্রিন ডেল্টা ইনস্যুরেন্স ও ঢাকা ইনস্যুরেন্স। এসব কম্পানির শেয়ার দাম কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে বিপুল মুনাফা তুলেছেন হিরো ও তাঁর সহযোগীরা। আর হিরোর ভেলকিতে পড়ে এসব শেয়ার কিনে টাকা হারিয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

বিএসইসির তথ্য অনুযায়ী, হিরো ও তাঁর সহযোগীরা ২০২১ সালের জুন থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ধারাবাহিক লেনদেনের মাধ্যমে সাত কম্পানির শেয়ার কারসাজি করেন। পুঁজিবাজারে বিএসইসির নির্দেশে ডিএসই গত বছরের ১৫ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বিডিকম অনলাইন ও ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির অভিযোগ তদন্ত করে। তদন্তে শেয়ার কারসাজির প্রমাণ পায় ডিএসই। এ ধরনের সিরিজ লেনদেন সিকিউরিটিজ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ কারণে আবুল খায়ের হিরো ও তাঁর স্ত্রী মোনার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিয়া, বাবা এবং তাঁর সহযোগী ডিআইটি কো-অপারেটিভ লিমিটেডকে তিন কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি। জরিমানার টাকা আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে বিএসইসির ইস্যু করা ব্যাংক ড্রাফট-পে অর্ডারের মাধ্যমে জমা না করলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়।

গত ২ আগস্ট দেওয়া ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, আবুল খায়ের হিরো তাঁর স্বজন-সহযোগীদের নিয়ে গত বছরের নভেম্বরে মাত্র ১৫ দিন ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন করে ১৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা মুনাফা তুলে নেন। নিজেদের মধ্যে শেয়ার কেনাবেচা করে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে এই মুনাফা করা হয়। এই কারসাজির জন্য হিরো তাঁর নিজের, বাবা, স্ত্রী, বোন, বন্ধুবান্ধব ও অনুসারীদের ১৪টি বিও অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন। বিডিকমসহ বাকি কম্পানিগুলোর শেয়ার দাম কারসাজির মাধ্যমে বাড়ালেও তারা মুনাফা তুলে নেয়নি। তা তাদের বিও হিসাবে জমা আছে। মানে সে শেয়ার তারা তখনো বিক্রি করেনি। অনাদায়ী এই মুনাফার পরিমাণ ছিল ১৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

শেয়ার কারসাজির দায়ে অভিযুক্ত সাদিয়া হাসান গত বছরের ১৫ থেকে ৩০ নভেম্বর ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের শীর্ষ ক্রেতা ছিলেন। মোনার্ক হোল্ডিংসের মাধ্যমেও এই শেয়ার কেনাবেচা করেন। তিনি তিন কোটি ৯৮ লাখ ২৯ হাজার ৯৩৬টি শেয়ার কিনেছেন এবং তদন্তের সময় ব্যাংকটির দুই কোটি ৩৩ লাখ ৫৬ হাজার ১১০টি শেয়ার বিক্রি করেছেন, যা এই সময়ের মধ্যে ব্যাংকটির শেয়ারের মোট লেনদেনের ১৩.৬৪ শতাংশ। হিরোর বাবা আবুল কালাম মাতবর এবং বোন কনিকা আফরোজও সে সময় ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের অন্যতম ক্রেতা ছিলেন।

ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদন ও বিএসইসির জরিমানার আদেশ থেকে জানা যায়, ওই ১৫ দিনে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের দাম সাড়ে সাত টাকা বা ৬০ শতাংশ বেড়ে যায়। ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের দামে বড় ধরনের উত্থানের সময় শেয়ার কেনাবেচার সঙ্গে ১৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জড়িত ছিল বলে ডিএসইর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

আবুল খায়ের সমবায় অধিদপ্তরের উপরেজিস্ট্রার। ৩১তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি এই পদে যোগদান করেন। ২০২০ সালের আগে তিনি স্টক মার্কেটে সম্পূর্ণ অপরিচিত ছিলেন। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময় বীমা, শেয়ারের দাম, বিশেষ করে সাধারণ বীমা কম্পানিগুলোর শেয়ারের অস্বাভাবিক উল্লম্ফনের পরে তাঁর নাম প্রথম সামনে আসে।

শেয়ারবাজারে কারসাজি প্রসঙ্গে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী গতকাল বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে, বিএসইসি নিশ্চয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। একের পর এক কারসাজি হতে থাকলে পুঁজিবাজার ভালোর দিকে যাবে না।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments