Monday, September 15, 2025
Homeঘটনা-দুর্ঘটনাযাত্রী নিয়ে আজ পদ্মা পাড়ি দেবে ট্রেন

যাত্রী নিয়ে আজ পদ্মা পাড়ি দেবে ট্রেন

পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেনে যাত্রী নিয়ে আজ বুধবার প্রথম চলাচল শুরু হবে। এর মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নতুন রেল যোগাযোগ স্থাপিত হচ্ছে।

আজ রাত পৌনে ১০টায় আন্তনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি খুলনা স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছাড়বে। রেলের তৈরি করা সময়সূচি অনুযায়ী, ভোর ৪টার পরপর ট্রেনটি পদ্মা সেতু অতিক্রম করবে। ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ভোর ৫টা ১০ মিনিটে।

  • কাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ট্রেনটি আবার ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে খুলনার উদ্দেশে যাবে। খুলনায় পৌঁছানোর কথা বিকেল পৌনে ৪টার দিকে। শুরুতে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটিও চলাচল করবে।
  • রেলওয়ে জানিয়েছে, সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকা থেকে খুলনার পথে ফরিদপুরের ভাঙ্গা, ফরিদপুর শহর, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়ার পোড়াদহ, চুয়াডাঙ্গা, যশোরসহ নয়টি স্টেশনে থামবে। বেনাপোল এক্সপ্রেসও একই পথ ধরে যাবে যশোরের বেনাপোল পর্যন্ত।
  • পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে রেলপথ নির্মাণে একটি প্রকল্প চলমান। এই প্রকল্পের অধীনে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ চালু হয়েছে। গত ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই পথে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেন। তবে যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু হচ্ছে আজ।

ভাঙ্গা থেকে গোপালগঞ্জ ও নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী জুনে চালু হওয়ার কথা। তখন আর রাজবাড়ী হয়ে খুলনায় যেতে হবে না। ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দূরত্ব কমে যাবে।

  • ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হয়। দ্বিতল এই সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। নিচ দিয়ে ট্রেন চলাচলের পথ। পদ্মার দুই পারে যোগাযোগ স্থাপন করতে নেওয়া হয় আলাদা প্রকল্প, যা ‘পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্প’ নামে পরিচিত।
  • রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে সরকার পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি অনুমোদন করে। শুরুতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। বর্তমানে এই প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকায়। চীনের অর্থায়নে দেশটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেলপথ নির্মাণের কাজটি করছে।
  • প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মিত হচ্ছে। এখন ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলা এবং মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা নতুন করে রেল যোগাযোগের আওতায় এসেছে। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নড়াইল জেলাও যুক্ত হবে।

ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ চালু করার কথা ছিল আগামী বছরের এপ্রিলে। নির্ধারিত সময়ের প্রায় ছয় মাস আগে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।

ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অংশে রেললাইন বসানোর কাজ চলছে পুরোদমে। আগামী জুনের মধ্যেই তা শেষ করার লক্ষ্য প্রকল্প কর্তৃপক্ষের।

তবে রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, নতুন রেলপথের জন্য যে পরিমাণ জনবল দরকার, তা নেই। ফলে পুরো সক্ষমতায় ট্রেন চালানো যাবে না।

প্রকল্পের সমীক্ষা অনুসারে, নতুন রেলপথ দিয়ে ২৪ জোড়া যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন চালানো যাবে। প্রতিদিন ৪০ হাজার যাত্রী পারাপার করতে পারবে। মোংলা বন্দরের সঙ্গে ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ভারতের পথে আন্তদেশীয় ট্রেন কম সময়ে চলতে পারবে। তবে এর জন্য নতুন করে ১ হাজার ৬৭৪ লোকবল দরকার। কিন্তু এখনো সরকার তা অনুমোদন করেনি।

পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। আগামী বছর জুনেই পুরো পথে রেল চালু হওয়ার আশা রয়েছে। টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে এত দিন খুলনায় ট্রেন যেতে ৪১২ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হতো। এই পথের দূরত্ব ২১২ কিলোমিটার কমে যাবে। সময় বাঁচবে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা।

  • নতুন এই রেলপথের জন্য চলতি মাসের শুরুতে ভাড়া ঠিক করেছিল রেল কর্তৃপক্ষ। তবে তা বাসের তুলনায় বেশি হওয়ায় সমালোচনা হয়। রেল কর্তৃপক্ষ ভাড়া কমিয়েছে।
  • গত মাসের শুরুতে রেল কর্তৃপক্ষ ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত আন্তনগর ট্রেনে (নন-এসি) ভাড়া নির্ধারণ করেছিল ৩৫০ টাকা। এখন তা কমিয়ে ২৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে ভাড়া কমল ১১৫ টাকা।
  • ট্রেনের টিকিটের সাতটি শ্রেণি আছে। প্রতি শ্রেণিতেই ভাড়া কমানো হয়েছে। এখন ঢাকা থেকে ভাঙ্গা জংশন পর্যন্ত শোভন শ্রেণির ভাড়া ধরা হয়েছে ১৯৫ টাকা, প্রথম শ্রেণির আসন ৩১০, প্রথম শ্রেণির বার্থের ভাড়া ৩৬৫, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) আসনের ভাড়া ৪৬৫ এবং এসি বার্থ শ্রেণির ভাড়া ৬৯৫ টাকা।

শোভন চেয়ারে ঢাকা থেকে যশোরের ভাড়া ছিল ৫৬৫, যা এখন ৪৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা থেকে খুলনা পথে ৬১৫–এর জায়গায় ভাড়া ৫০০ টাকা দিতে হবে যাত্রীদের।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments