Monday, September 15, 2025
Homeবিনোদনসুরের মূর্ছনায় মুগ্ধতা ছড়ালেন রাহাত ফতেহ আলী

সুরের মূর্ছনায় মুগ্ধতা ছড়ালেন রাহাত ফতেহ আলী

পাকিস্তানের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী রাহাত ফতেহ আলি খান রাতের আলোর সুরের মূর্ছনায় মুগ্ধতা ছড়ালেন। কাওয়ালিতে শ্রোতারা যেমন ছিলেন মন্ত্রমুগ্ধ, তেমনি হিন্দি চলচ্চিত্রের মেলোডি গানেও ছুঁয়ে দেন মন। সুরের জাদুকরের কণ্ঠের সঙ্গে তালে তালে দোলে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়াম। গ্যালারি থেকে মাঠ, উত্তর থেকে দক্ষিণ– হাজারো কণ্ঠ মিলেমিশে একাকার।

জুলাই-আগস্টের উত্তাল সেই দিনের কথা ভোলেননি কেউ। রক্তের বিনিময়ে পাওয়া নতুন বাংলাদেশের মুক্ত পরিবেশে বরাবরই তারুণ্যের উন্মাদনা। আর্মি স্টেডিয়ামে শনিবার ‘ইকোস অব রেভল্যুশন’ কনসার্ট সামনাসামনি যারা উপভোগ করেছেন, তারাই এ উন্মাদনার সাক্ষী।

 

এবার এই কনসার্ট তরুণদের কাছে এসেছে ভিন্ন অবয়বে। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সাহায্যের হাত বাড়ানোর এই কনসার্ট হয়ে ওঠে সবার আগ্রহের কেন্দ্রে। বিচিত্রি সুরের অবগাহনে কেটেছে ভিন্ন এক রাত। সুরের স্রোতধারার সঙ্গে প্রতিবাদী স্লোগানমুখর হয়ে ওঠে পুরো প্রাঙ্গণ। কনসার্ট-মঞ্চে উঠে শেখ হাসিনার বিচার দাবি। ছিল ঐক্যের আহ্বান।

দেশাত্মবোধক গান ‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা’ দিয়ে পরিবেশনা শুরু করে ব্যান্ডের ভোকা‌লিস্ট সু‌মি দেশপ্রেমের অনন্য আবহ শুরু করেন সন্ধ্যা নামতেই। এ সময় জনপ্রিয় ব্যান্ডদল চিরকুটের বাদ্যযন্ত্রীরা জাতীয় সংগীতের সুর তোলেন। স্টেডিয়ামে দর্শকের আসনে বসে থাকা শ্রোতারা জাতীয় সংগীতের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন।

এর পর ‘ম‌রে যাব’, ‘জাদুর শহর’, ‘আহা‌রে জীবন’-এর ম‌তো গান দিয়ে ঘোরলাগা ছড়িয়ে দেয় ব্যান্ড‌টি। এসব গানে যাতনা খুঁজে ফিরেছেন শ্রোতারা। চিরকুট মঞ্চ ছাড়ার আগে মুহুর্মুহু করতালিতে ব্যান্ডটির প্রতি ভালোবাসার জানান দেন শ্রোতারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাওয়ালি গানের দল বিকেল ৪টার দিকে সিলসিলার পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় কনসার্ট। এর পর ম‌ঞ্চে আসেন ‘আওয়াজ উডা’ গা‌নের জন্য প‌রি‌চিত র‍্যাপার হান্নান। শুরু‌তে তি‌নি প‌রি‌বেশন ক‌রেন সেই গান‌, যে গানের জন্য ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় জেল খে‌টে‌ছিলেন।

বির‌তির পর সা‌ড়ে ৫টার দি‌কে ম‌ঞ্চে আসে রক ব্যান্ড আফটারম্যাথ। এরআগে হান্নানের প‌রি‌বেশনার পর ম‌ঞ্চে আসেন আরেক আলো‌চিত র‍্যাপার সেজান। ‘কথা ক’ গান দি‌য়ে সাধারণ শ্রোতা‌দের মা‌ঝে প‌রি‌চিতি পে‌য়ে‌ছেন সেজান। ম‌ঞ্চে গানটি ধর‌লে শ্রোতা‌দের মধ্যে সাড়া পড়ে।

কনসার্টের অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন কিংবদন্তি পাকিস্তানি সংগীতশিল্পী রাহাত ফতেহ আলি খান। বিনা পারিশ্রমিকে তিনি অংশ নিয়েছেন এই সংগীতায়োজনে। এই শিল্পী যতক্ষণ গান গেয়েছেন শ্রোতারা তন্ময় হয়ে শুনেছেন, কখনও উচ্ছ্বাসে আত্মহারা হয়ে শূন্যে ভাসিয়েছেন নিজেদের।

জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তির পরিবারকে সহায়তার জন্য কনসার্টটি আয়োজন করে ‘স্পিরিটস অব জুলাই’ প্ল্যাটফর্ম। বেলা ২টায় কনসা‌র্টের দ‌রজা খোলে‌। আগে থে‌কে আর্মি স্টে‌ডিয়া‌মের সাম‌নে সংগীতানুরাগী‌দের দীর্ঘ সা‌রি দেখা গে‌ছে। বাইরে সড়কে ছিল দীর্ঘ যানজট। জনদুর্ভোগ বিবেচনায় নিয়ে এদিন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে টোল ফ্রি রাখা হয়। কেউ বন্ধুদের সঙ্গে, কেউ একা; কেউ পরিবারের সঙ্গে; ভিড় ঠেলে সবার পথ এসে মিলেছে আর্মি স্টেডিয়ামে। কনসার্ট উপস্থাপনা করেন জুলহাজ জুবা‌য়ের ও দীপ্তি চৌধুরী।

আয়োজকরা জানান, এই কনসার্ট থেকে আয় হওয়া অর্থ শহীদ ও আহত ব্যক্তির পরিবার নিয়ে কাজ করা কল্যাণমূলক সংস্থা ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এ দেওয়া হবে। গান ছাড়াও জুলাই বিপ্লব-সংক্রান্ত গ্রাফিতি প্রদর্শনী, মঞ্চ নাটক ও মুগ্ধ ওয়াটার জোন কনসার্টে যুক্ত করে ভিন্ন মাত্রা।

এশার আজানের বিরতির পরই মঞ্চে আসেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। আরও ছিলেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাত হারানো আতিকুল ইসলাম, মুখমণ্ডল হারানো খোকন চন্দ্র বর্মণ, আন্দোলনে নিহত সৈকতের বোন, মুগ্ধর ভাই স্নিগ্ধ ও আবু আহনাফের মা।

কনসার্টে উপস্থিত তরুণদের উদ্দেশে সারজিস বলেন, আজ আমরা কীসের ওপর দিয়ে এই দেশে এখনও আছি তা সবাই জানেন। যারা এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সবাই জানেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন দিয়ে এই যাত্রা শুরু হয়েছিল, পরে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন শুরু হলে সারাদেশের ছাত্র-জনতা এতে অংশ নিয়েছিল।

মঞ্চে কথা বলেন গণঅভ্যুত্থানে নিহত আহনাফের মা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সন্তানের হত্যাকারী শেখ হাসিনার বিচার দাবি করেন তিনি। সরকার পতনের চার মাস পরও কীভাবে হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি।

রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে মঞ্চে ওঠেন রাহাত ফতেহ আলী খান। দর্শকেরা করতালি দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান। মঞ্চে উঠেই পরিষ্কার বাংলায় রাহাত ফতেহ আলী খান বলে ওঠেন, ‘আসসালামু আলাইকুম। বাংলাদেশ, আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ আর্মি স্টেডিয়ামের অগণিত দর্শকের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে গান ধরলেন, ‘তু না জানে আস পাস হ্যায় খুদা’। এরপর একে একে গেয়ে শোনান ‘সাজনা তেরা বিনা’, ‘ওরে পিয়া’, ‘জরুরি থা’, ‘মেরে রাশকে কামার’, ‘আফরিন আফরিন’সহ তাঁর জনপ্রিয় গানগুলো।

রাত সা‌ড়ে ১১টায় জনপ্রিয় এই সংগীতশিল্পী তার ছেলে শাহজামান ফতেহ আলী খানকে মঞ্চে আহ্বান করেন। বাবার সঙ্গে তিনিও গানে অংশ নেন। ‘দমা দম মাস্ত কালান্দার’ দি‌য়ে এই সুরের মূর্ছনা অনুষ্ঠান প‌রি‌বেশনা শেষ ক‌রেন রাহাত ফ‌তেহ আলী।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments