জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল) দীর্ঘ ১৪ বছর পর প্রথম শ্রেণির পাশাপাশি টি২০ ফরম্যাটে ফিরে এসেছে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টজুড়ে ছিল উদীয়মান, ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞ পারফর্মার আর জাতীয় দলের বাইরে থাকা খেলোয়াড়দের ব্যাট-বলের মনোমুগ্ধকর প্রদর্শনী।
মঙ্গলবার দুপুরের ফাইনালটা হলো একেবারেই অনুজ্জ্বল, একতরফা। অন্যসব ম্যাচগুলোর মত জম-জমাট ম্যাচ, ঝড়ো সেঞ্চুরি আর চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি থেকে বঞ্চিত ছিলো ফাইনাল ম্যাচের দর্শকরা। টস জিতে ফিল্ডিং একেবারেই বেছে নেন রংপুর বিভাগের অধিনায়ক আকবর আলি।
রোদ্রোজ্জ্বল শীতের দুপুরে ম্যাচ শুরু আগে দুই অধিনায়কই অন্তত দেড়শ’ রানের আশা করেছিলেন। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন রংপুর বিভাগের বোলারদের ছিল ভিন্ন ভাবনা। মুকিদুল-আলাউদ্দিনের আগুনঝরা বোলিংয়ে ১৬.৩ ওভারে ৬২ রানেই অলআউট নাঈম শেখের ঢাকা মেট্রো! ছোট লক্ষ্য তাড়ায় আকবরের দলও অবশ্য স্বস্তিতে ছিল না। শুরুর ধাক্কা সামলে ১১.২ ওভারে ৫ উইকেটের জয়ে শ্রেষ্ঠতের উল্লাসে মাতে রংপুর শিবির। ১২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ফাইনালের নায়ক পেসার মুকিদুল ইসলাম।
মুকিদুলের প্রথম বলে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান ইমরানউজ্জামান। তবে এক বল পর একই জায়গায় ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। পরের ওভারে নাঈম শেখকে কট বিহাইন্ড করেন আলাউদ্দিন। রানের খাতা খুলতে পারেননি মেট্রো অধিনায়ক। তবে ৯ ম্যাচে তিন ফিফটিসহ ৩১৬ রান করে বাঁহাতি ওপেনারই আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
ম্যাচের তৃতীয় ওভারে জোড়া আঘাত হানেন মুকিদুল। ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে বোল্ড হন আনিসুল ইসলাম। পরের বলে আউটসুইং ডেলিভারিতে স্লিপে ক্যাচ দেন আমিনুল ইসলাম। মাত্র ৮ রানে প্রথম ৪ ব্যাটসম্যানের উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে মেট্রো।
পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগে গাজী তাহজিবুল ইসলামও ধরেন ড্রেসিং রুমের পথ। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে চমৎকার ভেতরে ঢোকানো ডেলিভারিতে বোল্ড করেন আলাউদ্দিন। প্রথম ৬ ওভারে অর্ধেক উইকেট হারানো দলকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন মোসাদ্দেক হোসেন ও শামসুর রহমান। দুজনের জুটিতে আসে ইনিংসের সর্বোচ্চ ১৭ রান। কিন্তু চল্লিশের আগেই ড্রেসিং রুমে ফেরেন তারা। দলের সর্বোচ্চ ১৪ রান করেন শামসুর।
পরে আবু হায়দারের ২ চারে ৯ বলে ১৩ রানে মেট্রো কোনোমতে পঞ্চাশ পেরোয়। গুটিয়ে যায় ৬২ রানে। বাংলাদেশের টি২০ টুর্নামেন্টের ফাইনালে সর্বনি¤œ রানে অলআউটের লজ্জার রেকর্ড গড়ে ঢাকা মেট্রো। ২০১৬ সালের বিপিএলে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ১০৩ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল রাজশাহী কিংস।
সর্বোপরি বিশ্বের স্বীকৃত টি২০ টুর্নামেন্টের ফাইনালে রেকর্ডটা গত মার্চে জিম্বাবুয়ের ঘরোয়া আসরের, ডারহামের ২২৯ রানের জবাবে মাত্র ১৬ রানে গুটিয়ে যায় মাশোনাল্যান্ড ঈগলস। আর জুনে শ্রীলঙ্কার মেজর ক্লাব টি২০তে নন্দেস্ক্রিপ্টসের বিপক্ষে ব্লুমফিল্ড অলআউট হয়েছিল ৫৪ রানে।
ছোট লক্ষ্যে রংপুরের শুরুটাও হয় নড়বড়ে। পাঁচ ওভারের ভেতরে ড্রেসিং রুমে ফেরেন চার ব্যাটসম্যান। চতুর্থ ওভারে আব্দুল্লাহ আল মামুন ও নাঈম ইসলামকে ফেরান আলিস আল ইসলাম। পরের ওভারে আবু হায়দারের বলে এলবিডব্লিউ চৌধুরি মোহাম্মদ রিজওয়ান। তাহজিবুলের দারুণ থ্রোয়ে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায়ঘণ্টা বাজে আকবরের। তবে এরপর তেমন বিপদ হয়নি রংপুরের।
চার নম্বরে নেমে একপ্রান্ত ধরে রাখেন তানবীর হায়দার। ১টি করে চার-ছক্কায় ১৪ রান করে ফেরেন আরিফুল হক। পরে এনামুল হককে নিয়ে ম্যাচ শেষ করেন তানবীর। ফাইনালে বেশি কিছু করতে না পারলেও আসরজুড়ে ব্যাটে-বলে আলো ছড়িয়েছেন অভিজ্ঞ আবু হায়দার। ৯ ম্যাচে ১৩ উইকেট ও ব্যাট হাতে ১৬৪ স্ট্রাইক রেটে ১২৩ রান করে টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার উঠেছে মেট্রোর বাঁহাতি অলরাউন্ডারে হাতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
ঢাকা মেট্রো: ৬২/১০ (১৬.৩ ওভার; ইমরানউজ্জামান ৪, নাঈম ০, আনিসুল ৩, শামসুর ১৪, আমিনুল ০, তাহজিবুল ২, মোসাদ্দেক ৬, আবু হায়দার ১৩, শহিদুল ৬, রকিবুল ৩; মুকিদুল ৩/১২, আলাউদ্দিন ৩/১২)।
ফলাফলঃ
রংপুরঃ ৬৫/৫ (১১.২ ওভার; রিজওয়ান ৯, মামুন ২, তানবীর ৮*, আরিফুল ১৪, এনামুল ১৪*; আবু হায়দার ১/৮, আলিস ২/১৩)।
৫ উইকেটে জিতে চ্যাম্পিয়ন রংপুর
ম্যান অব দ্যা ম্যাচঃ মুকিদুল ইসলাম (রংপুর)
ম্যান অব দ্যা টুর্নামেন্টঃ আবু হায়দার (ঢাকা মেট্রো)