Monday, September 15, 2025
Homeঅন্যান্যআমজনতার মুড়ি খাওয়াতেই আনন্দ

আমজনতার মুড়ি খাওয়াতেই আনন্দ

এ দেশের ৫০তম বাজেট প্রস্তাব পেশ হয়ে গেল সম্প্রতি। সেই আনন্দে আমজনতা আম ছাড়া আর কী কী খাওয়ার সুযোগ পেল? একটি সম্ভাবনা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে আর কিছু না হোক, মুড়ি অন্তত সুলভে মিলতে পারে। কবিগুরুর ভাষায় সুর ও শব্দ মিলিয়ে তাই বলাই যায়, ‘আমার এই মুড়ি খাওয়াতেই আনন্দ…’!

মুড়ি খাওয়ার বিষয়টি আমাদের সমাজে একটু তুচ্ছার্থক ভঙ্গিমায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কারও কিছু করার না থাকলে এবং হতাশা চরম মাত্রায় গেলে মুড়ি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু শর্ষের তেল বা আচারের তেল, পেঁয়াজ-মরিচ, চানাচুর, পিয়াজু, বেগুনি ইত্যাদি অনুষঙ্গ ব্যবহার করলে মুড়ি বেশ উপাদেয় হয় বৈকি। এবারের বাজেটে আবার দেশি জিনিস ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং আমজনতা আশান্বিত হতেই পারে।

তবে কি ম্যাংগো পিপলদের জন্য মুড়ি ছাড়া কিছুই নেই বাজেটে? আছে হয়তো। কিন্তু তা এতটাই গহিন-গভীরে যে আমার মতো সাধারণের তাতে তল খুঁজে পাওয়া কঠিন। আমি পাচ্ছিও না তেমন। যতটুকু পেলাম, তাতে বোঝা গেল এই মহামারির দুনিয়ায় কষ্টেসৃষ্টে আয় করেও কর আমাকে দিয়ে যেতেই হবে আগের মতো করে। কোনো মাফ নেই।

তবে ব্যবসায়ীরা পেয়েছেন অনেক। সংবাদমাধ্যমের বদৌলতে জানা গেল, ব্যবসায়ীদের জন্য নাকি আছে ছাড়ের পর ছাড়। করপোরেট করহার কমানোর প্রস্তাব উঠেছে। আছে লাভ-লোকসাননির্বিশেষে ন্যূনতম করে ছাড়। আবার আগাম ভ্যাট কমল ১ শতাংশ। এমনকি শাস্তিও কমে গেছে! খবরে প্রকাশ, ভ্যাটের জরিমানার পরিমাণও কমানো হয়েছে। ভ্যাট ফাঁকি, ব্যর্থতা ও অনিয়মের ক্ষেত্রে আরোপিত জরিমানার পরিমাণ জড়িত রাজস্বের দ্বিগুণের পরিবর্তে সমপরিমাণ করা হয়েছে। অর্থাৎ অপরাধ করলে বা ভ্যাট ফাঁকি দিলে এখন জরিমানাও কম দিতে হবে ব্যবসায়ীদের। বুঝুন তাহলে, সোনাকপাল কাকে বলে!

কেউ কিছু পেলে অবশ্য আমার মতো অতি সাধারণ ‘মুড়ি খাওয়া’ মানুষের মন খারাপের মতো কিছু হয় না। আমরা তো মেনেই নিয়েছি যে পেলে অল্প কিছুই পেতে পারি। যৎসামান্য খেতে খেতে যে পেটটাই ছোট হয়ে গেছে। শুধু কিছুই না পেলে রিক্ত হৃদয়ে একটু খচখচ করে। কই মাছের কাঁটার মতো তা গিলে ফেলার চেষ্টাও চলে। একপর্যায়ে ব্যর্থ হয়ে তা উদাস নয়ন সৃষ্টির কারণে পরিণত হয়। মনে পড়ে যায় প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া সেই বিখ্যাত গানের কলি, ‘ভালোবেসে গেলাম শুধু, ভালোবাসা পেলাম না, আশায় আশায় দিন যে গেল, আশা পূরণ হলো না…’।

একপর্যায়ে সেই গানের সুরে বিষণ্ন হয়ে যায় মন। তবে তা ভালো করার উপাদান কিন্তু এবারের বাজেটে আছে। সেটিই হলো একটি আশাবাদ—মুড়ির দাম কমলেও কমতে পারে! এবারের বাজেটে মুড়ি উৎপাদনে স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাই বলে এখনই নিশ্চিন্তে কম দামে মুড়ি কিনে পেট ভরানোর পরিকল্পনা করতে পারবেন না। কারণ, মুড়ির দাম আদৌ কমবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্নবোধক চিহ্ন যে থেকেই যাচ্ছে। কারণ, সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, এত দিন মুড়ি উৎপাদনে ভ্যাট আদায় খুব একটা হতো না। তবে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো মুড়ি উৎপাদন ও বিক্রিতে ভ্যাট ছাড় পাবে।

অর্থাৎ মুড়ি কিনে লাভ করতে চাইলে কিনতে হবে ‘করপোরেট’ মুড়ি। তা-ই সই। জীবনে আর কী আছে? শুধু ব্যবসা নেই বলে আজ নানা সুবিধা থেকে আমার মতো মাসকাবারির সংসারের ঘানি টানা বলদেরা বঞ্চিত হলো। তেল নিয়ে গেল অন্যরা, আর আমার বাটিতে থেকে গেল শুকনো মুড়ি।

থাক, বাদ দিন। এত না ভেবে বরং চলুন মুড়ি খাওয়া শুরু করা যাক। খেতে যখন হবেই আগেভাগে শুরু করাই ভালো। মুড়ি খেতে খেতে হতাশা দূর করার চেষ্টা চলুক। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ী হওয়ার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও ঝালিয়ে নেওয়া যাবেখন। যেদিকে বৃষ্টি, সেদিকেই তো ছাতা ধরা উচিত, নাকি?

লেখকঃ অর্ণব সান্যাল। সূত্রঃ প্রথম আলো

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments