Saturday, September 13, 2025
Homeরাজধানীজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়জবির ‘বিতর্কিত’ শিক্ষক অর্থ পরিচালক পদে টিকে থাকতে মরিয়া

জবির ‘বিতর্কিত’ শিক্ষক অর্থ পরিচালক পদে টিকে থাকতে মরিয়া

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাজী নাসির উদ্দিন। শিক্ষকতার পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তাকে ২০১৯ সালের ২৪ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দফতরের পরিচালক করা হয়।

দায়িত্ব গ্রহণের পর নিয়ম না মেনে নিজের নামে অর্থ উত্তোলন, অন্য শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নামে অর্থ বরাদ্দ দেয়াসহ বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়মের অভিযোগ তদন্তও করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক উপাচার্যের ড. মীজানুর রহমানের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত কাজী নাসির উদ্দিন। তিনি নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক মিলনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনেও অর্থ ও হিসাব দফতরে পরিচালক পদে বহাল থাকতে জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ও কর্মকর্তারা বিতর্কিত এই ব্যক্তিকে অর্থ ও হিসাব দফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রাখার বিপক্ষে।

১০ হাজার টাকার বেশি বা একই অর্থবছরে একবারের বেশি সম্মানী দেয়ার ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের সম্মতি বা অনুমোদন নিতে হবে। কোনো রুটিন কাজের জন্য সম্মানী দেয়া যাবে না। কিন্তু জবির অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা এ নিয়ম না মেনেই বছরে বিভিন্ন কাজ দেখিয়ে ৮-১০টি অতিরিক্ত বেসিক সমপরিমাণ অর্থ গ্রহণ করেছেন। এসব অনিয়মের মূল কারিগর হিসেবে অর্থ ও হিসাব দফতরের পরিচালক কাজী নাসির উদ্দিনকে দেখে থাকেন অনেক শিক্ষক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। যাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে জড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। নতুন উপাচার্যের উচিত হবে বিতর্কিতদের সরিয়ে ক্লিন ইমেজধারী শিক্ষকদের প্রশাসনিক দায়িত্বে আনা।

খোঁজ নিয়ে গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে অর্থ বিভাগের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ অনুবিভাগের জারি করা আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ সংক্রান্ত নির্দেশনা অনুযায়ী বাজেটে অর্থ সংকুলান সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক একজন কর্মচারীকে বছরে একবার সর্ব্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত সম্মানী দেয়া যাবে।

জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে আয়করের জন্য বেতন বিবরণী, ভর্তি পরীক্ষার কাজ, সেমিস্টার পরীক্ষার পারিতোষক, বাজেটে প্রস্তাব পাঠানোর কাজ দেখিয়ে অর্থ ও হিসাব দফতরের কর্মকর্তারা পৃথক পৃথক বেসিক পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করেছেন।

কাজী নাসির উদ্দিন ২০১৯ সালের ২৪ জুন অর্থ ও হিসাব দফতরের পরিচালক হিসাবে যোগ দেন। তিনি জুন মাসে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের কাজের জন্য ছয়দিনের বিপরীতে এক মাসের সমপরিমাণ ৫২ হাজার টাকা নিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসাবে একজন গবেষক ও ক্লিন ইমেজধারী অভিভাবককে পেয়েছি। কিন্তু বিতর্কিত ব্যক্তিকে যদি পদে বহাল বা মেয়াদ বাড়ানো হয়, তবে তারা উপাচার্যকেও এসব অনিয়মে জড়িয়ে ফেলতে পারেন। আশা করি—বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একজন যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিকে এ পদে নিয়োগ দেবেন। প্রশাসনিক পদগুলোতে পরিবর্তনের মাধ্যমে আগের অনিয়মগুলো ঠেকানো সম্ভব।’

লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্সের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, ‘সাবেক উপাচার্যের মেয়াদকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদগুলোতে কয়েকজন ব্যক্তিকেই ঘুরে-ফিরে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একজন ব্যক্তিকে বারবার প্রশাসনিক পদে নিয়োগ দেয়ায় অনিয়মের সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্যের প্রতি আমাদের দাবি—প্রশাসনিক পদগুলোতে যেন একই শিক্ষককে বারবার নিয়োগ বা মেয়াদ বৃদ্ধি করা না হয়।’

বিশ্ববিদ্যালয় সান্ধ্যকালীন কোর্সের নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিটি বিভাগ কোর্সের ৩৩ ভাগ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা হয়। কিন্তু এই ৩৩ ভাগ অর্থের ব্যয়ের ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট নীতিমালা নেই। এই অস্পষ্টতার সুযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যে যার মত করে ব্যয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্সের কাজ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান ৭৮ হাজার টাকা, অর্থ ও হিসাব দফতরের পরিচালক কাজী নাসির উদ্দিন ৫৪ হাজার টাকার আরেকটি বেসিক সমপরিমাণ অর্থ বরাদ্দ নেন বলে জানা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘কাকে, কোন পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে; সে বিষয়ে কিছু জানি না। এখন পর্যন্ত কোনো ফাইলও আসেনি। অফিসিয়ালি ফাইল এলে বলতে পারব, কাকে কোন পদে বহাল, সরানো কিংবা নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সচিব ফেরদৌস জামান বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থের হিসাব পর্যালোচনা করার সময় আমাদের অডিট টিমেরই আপত্তি ছিল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি বিষয়ে শিগগির ইউজিসি তদন্ত শুরু করবে।’

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments