নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে কঠোর লকডাউন চলছে। লকডাউনে শিল্প প্রতিষ্ঠান ছাড়া প্রায় সবকছিুই বন্ধ রয়েছে। বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন।
এতকিছুর পরেও নারায়ণগঞ্জে হু হু করে বেড়েই চলেছে করোনায় সংক্রমন শনাক্তের সংখ্যা। জুলাইয়ের শুরুতে এসে যা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। নারায়ণগঞ্জেও করোনা আক্রান্তদের মধ্যেও ভারতীয় ডেল্টা ভেরিয়েন্ট বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।
১ জুলাই থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে পাঠানো করোনা পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায় ৬ দিনেই শনাক্ত হয়েছে ৬২৬ জন। ৬ দিনে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২ হাজার ৫ জনের। প্রতিদিন গড়ে নমুনা পরীক্ষার ৩৬ শতাংশের বেশী করোনা পজিটিভ ধরা পড়ছে।
সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য মতে, ১ জুলাই ৪১২ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যার মধ্যে করোনা পজিটিভ আসে ১০০ জনের। যা নমুনা পরীক্ষার ২৪.২৭ শতাংশ। ২ জুলাই ২৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। করোনা পজিটিভ আসে ১০৯ জনের। যা নমুনা পরীক্ষার ৪৪.৮৬ শতাংশ। ৩ জুলাই ১২৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। করোনা পজিটিভ আসে ৪৬ জনের। যা নমুনা পরীক্ষার ৩৬.৫১ শতাংশ। ৪ জুলাই নমুনা পরীক্ষা করা হয় ৪০৩ জনের। করোনা পজিটিভ আসে ৯৫ জনের। যা নমুনা পরীক্ষার ২৩.৫৭ শতাংশ। ৫ জুলাই নমুনা পরীক্ষা করা হয় ৩৯৮ জনের। করোনা পজিটিভ আসে ১১২ জনের। যা নমুনা পরীক্ষার ২৮.১৪ শতাংশ। ৬ জুলাই নমুনা পরীক্ষা করা হয় ৪২৩ জনের। করোনা পজিটিভ আসে ১৬৪ জনের। যা নমুনা পরীক্ষার ৩৮.৭৭ শতাংশ।
সংক্রমণ শনাক্তের সাথে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকলেও গত দুই দিনে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ৪ জুলাই ৫৫ বছরের এক নারীরর মৃত্যু হয়। তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। নারায়ণগঞ্জে করোনা ডেডিকেটেড ৩০০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তাঁর। ৫ জুলাই ৭০ বছরের বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। তিনিও ৩০০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। তিনি বন্দর উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন।
নারায়ণগঞ্জে কঠোর লকডাউন থাকলেও হাসপাতালে ক্রমশ রোগীর চাপ বাড়ছে। প্রতিদিনই গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে রোগী আসছে। অধিকাংশই শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। যাদের প্রত্যেকের অক্সিজেন লেভেল লো। তবে এসব রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতে আগ্রহী না। অক্সিজেন নিয়ে বাসায় ফেরৎ যাচ্ছে বলে জানান ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে কর্মরত এক নার্স।
এদিকে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ১১০টি বেড রয়েছে। যার মধ্যে ১০০টি জেনারেল বাকি ১০টি আইসিইউ বেড। হাসপাতালে বর্তমানে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৪৬ জন। যার মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৭ জন।
নারায়ণগঞ্জের ৩০০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল বাশার জানান, ‘এই মুহূর্তে করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। হাসপাতালের বেড পর্যাপ্ত থাকলেও আইসিইউ বেড রয়েছে মাত্র ৩টি। তাই সবাইকে সচেতন ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা করা জরুরী।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জানান, ‘নারায়ণগঞ্জে কোভিড-১৯ এর ডেল্টা ভেরিয়েন্ট (ভারতীয় ভেরিয়েন্ট) পরীক্ষা করার জন্য ল্যাব নেই। সারা দেশে এখন নতুন করে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের ৮০ ভাগই ডেল্টা ভেরিয়েন্ট। সে হিসেবে নারায়ণগঞ্জেও আক্রান্ত আছে। তাই সবাইকে সর্তক থাকতে হবে। করোনা সুরক্ষায় লকডাউনের বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। আর যারা জরুরী প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবে তাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।’