নোয়াখালী জেলা শহরে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আওয়ামী লীগের তিনটি কমিটির সমাবেশ আহ্বানের পর সংঘর্ষ জড়িয়েছেন নেতাকর্মীরা।
রোববার বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত নোয়াখালীর মাইজদীর টাউন হল মোড় থেকে রশিদ কলোনী পর্যন্ত আবদুল মালেক উকিল প্রধান সড়কে ত্রিমুখী সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হওয়ার খবর জানিয়েছে পুলিশ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নোয়াখালী পৌরসভা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও ডিসি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল ১০টায় শহরের টাউন হল মোড়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সমাবেশের ডাক দেয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন।
একই সময় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে ২০১৯ সালের সম্মেলনে ঘোষিত জেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার দাবিতে সমাবেশ ডাকেন স্থানীয় সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরী।
অপরদিকে সকাল ১০ টায় নোয়াখালী পৌরসভায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও র্যা লির আয়োজন করেন পৌর মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেল।
আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী সমাবেশ ও আলোচনা সভা সফল করতে রোববার বিকালে শহরের রশিদ কলোনি থেকে মোটরসাইকেল শোডাউন বের করেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীনের সমর্থিত নেতাকর্মীরা।
মোটরসাইকেল শোডাউনটি শহরের বড় মসজিদ মোড়ে পৌঁছালে বাধা দেয় পুলিশ।
এসময় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেওয়া সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীর অনুসারীরা পুলিশের সঙ্গে যোগ দিয়ে শাহীনের অনুসারীদের ধাওয়ার চেষ্টা করলে শাহীন অনুসারীরা পুলিশ এবং একরাম অনুসারীদের পাল্টা ধাওয়া করেন।
তখন পুলিশ এলোপাতাড়ি লাঠিচার্জ করে। এতে শাহীন অনুসারীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
এসময় বেশ কিছু যানবাহনে ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। শহরের প্রবেশ পথে জটলা বাধে শতশত গাড়ি। ভোগান্তির শিকার হয় পথচারী ও ব্যবসায়ীরা।
এসময় আহত হন পথচারী আলমগীর, জনি, ইসতিয়াক, নাসিমা বেগম, সদর উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান নূর আলম ছিদ্দিকী রাজু, আওয়ামী লীগ নেতা কামাল উদ্দিন, যুবলীগ কর্মী মোহন, ছাত্রলীগ নেতা রাজুসহ অন্তত ১৬ জন।
এদিকে বিকাল ৫টার দিকে নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেলের কর্মী-সমর্থকরা সোমবারের পূর্ব ঘোষিত আলোচনা সভা ও র্যা লি সফল করার লক্ষ্যে শহরের প্রধান সড়কে শোডাউন বের করে।
শোডাউনটি টাউন হল মোড়ে পৌঁছালে তাদের ওপর সাংসদ একরামের অনুসারীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে পুনরায় শহরের পৌর বাজার থেকে রশিদ কলোনি প্রধান সড়কে অবস্থান নিয়ে পুলিশি হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে শিহাব উদ্দিন শাহীনের অনুসারীরা।
নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেল সমকালকে জানিয়েছেন, হামলায় তার পাঁচ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন বলেন, ‘সুধারাম থানার ওসি শাহেদের নেতৃত্বে পুলিশ বাধা দেয় আমাদের মিছিলে। এসময় ওসির সহযোগিতায় একরাম চৌধুরীর কিছু সমর্থক আমার কর্মীদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে, পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়ে। আমি ওসি শাহেদের অপসারণ চাই।
সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীর অনুসারীর ও নোয়াখালী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু বলেন, ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শহীদ ভুলু ষ্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন।
ওই আংশিক কমিটি পূনাঙ্গ কমিটি বাস্তবায়নের দাবিতে সোমবার সকালে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
পিন্টু বলেন, ‘ওই সমাবেশকে পণ্ড করতে একরাম চৌধুরীর প্রতিপক্ষের লোকজন আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করেছে।’
নোয়াখালী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলা ও সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য ও শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এ ধারা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’