Monday, September 15, 2025
Homeরাজধানীরামপুরায় ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, শাহবাগে কফিন মিছিল

রামপুরায় ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, শাহবাগে কফিন মিছিল

রাজধানীতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন ও প্রতীকী লাশের কফিন নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে রামপুরা ব্রিজে দাঁড়িয়ে সেখানকার শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনের মাধ্যমে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করে। একই সময় শিক্ষার্থীদের আরেক অংশ শাহবাগে প্রতীকী লাশের কফিন নিয়ে মিছিল করে। কফিন ও ব্যঙ্গচিত্রে সড়কে চলমান অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের চিত্র ফুটে উঠেছে বলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দাবি করে। এর আগে, শনিবার নিরাপদ সড়কের দাবিতে লাল কার্ড প্রদর্শন করেছিল শিক্ষার্থীরা।

আজ সোমবার রামপুরা ব্রিজে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নাঈম হাসান ও মাইনুদ্দিন ইসলামের স্মরণে শোক জানাতে কালো ব্যাজ ধারণ ও মুখে কালো কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বালন ও প্রতিবাদী গানের আসর করার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে টানা কর্মসূচি পালন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। তারা দাবি বাস্তবায়নের জন্য একের পর এক কর্মসূচিতে ভিন্নতাও এনেছেন।

এদিকে, রামপুরায় বাসচাপায় শিক্ষার্থী নিহতের জের ধরে কয়েকটি বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে রামপুরা থেকে স্বপন রেজা ও শহীদ ব্যাপারীকে গ্রেফতার করা হয়। বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় রামপুরা থানা পুলিশের করা মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। এর মধ্যে স্বপন সবজি বিক্রেতা আর শহীদ গাড়ি চালক। বর্তমানে তারা দুজন আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম।

গতকাল বেলা সোয়া ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন শুরু করেন। মানববন্ধনে নিয়ে আসা শিক্ষার্থীদের ব্যঙ্গচিত্রে সরকার ও বাস মালিকদের যোগসাজশে সড়কে যে অনিয়ম চলছে তা ফুটিয়ে তোলেন। শিক্ষার্থীদের ব্যঙ্গচিত্রে দেখা গেছে, বাসের চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীরা মারা যাচ্ছেন, শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করছেন, সরকারকে ভক্তি করছেন বাস মালিকেরা আর পুলিশ বলছে কিছু দেখিনি, কিছু শুনিনি, কিছু বুঝিনি। আরেকটি ব্যঙ্গচিত্রে দেখা গেছে, প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের দড়ি বাস মালিকদের হাতে, আর প্রশাসন ঘুমাচ্ছে, শিক্ষার্থীরা রাজপথে আন্দোলন করছেন।

চিত্রটিতে আরও দেখা যায়, একজন ছাত্রী নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন- আমার ভাই মরল কেন? প্রশাসন জবাব চাই। কিন্তু মালিক পক্ষ প্রশাসনের গলায় দড়ি বেঁধে রাখায় প্রশাসন ওই ছাত্রীর দাবির দিকে মনোযোগ না দিয়ে ঘুমাচ্ছেন। আরেকটি ব্যঙ্গচিত্রে দেখা যায়, সরকার একটি সিংহাসনে বসে আছে আর সরকারের পায়ের নিচে বাস মালিক পক্ষ। পাশ দিয়ে একজন শিক্ষার্থী নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করছেন। কিন্তু একজন পুলিশ সদস্য মালিক ও সরকারের নির্দেশে ওই শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হচ্ছেন।

পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ব্যঙ্গায়িত করা হয়েছে। ব্যঙ্গচিত্রটিতে দেখা যায়, একজন ছাত্র বুকে লিখে আন্দোলন করছেন ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। কিন্তু ছাত্রের আন্দোলন দেখে এক পুলিশ সদস্য লাঠি হাতে এগিয়ে আসছেন এবং বলছেন ‘আয়রে তোকে জাস্টিস দেই’ আমার মাথার ওপর কার হাত আছে জানিস? রাইদা ও অনাবিল বাস নিয়েও একটি ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করছেন শিক্ষার্থীরা। ব্যঙ্গচিত্রে দেখা যায়, রাইদা পরিবহনের একটি বাস অন্য একটি বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। এই দুই বাসের সামনে একজন শিক্ষার্থী রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। চিত্রটির বাম পাশে কালো কালিতে লেখা ‘মা, আজ রাতে বাসায় ফিরবো না’। ডান পাশে লেখা অনাবিল বাস।

আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী খিলগাঁও মডেল কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, দাবি বাস্তবায়নের জন্য আমাদের আন্দোলনে কিছুটা ভিন্নতা এনেছি। শনিবারও লালকার্ড প্রদর্শন করে সড়কের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছি। রবিবার আরও কিছুটা ভিন্নতা এনে সড়কে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরার জন্য আমরা ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করেছি। আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলমান থাকবে।

ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, ১১ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রামপুরা ব্রিজে দাঁড়িয়ে ‘লুটপাটের আস্তানা, জ্বালিয়ে দাও গুঁড়িয়ে দাও, ছাত্র হত্যার আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও, গুজব ছড়িয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’ স্লোগান দেন। আন্দোলন শেষ করার আগে আজ সোমবার রামপুরা ব্রিজে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নাঈম হাসান ও মাইনুদ্দিন ইসলামের স্মরণে শোক জানাতে কালো ব্যাজ ধারণ ও মুখে কালো কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ করার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে একই দাবিতে শাহবাগে প্রতীকী লাশের কফিন নিয়ে মিছিল কর্মসূচি পুলিশের ‘সতর্কতার ঘেরাটোপে’ পালন করেছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচিতে ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। অন্যদিকে কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগে থেকে প্রায় শেষ পর্যন্ত শাহবাগ এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিল। পুলিশের এই উপস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীরা ‘সড়কে হত্যার শিকার ব্যক্তির প্রতীকী লাশ’ নিয়ে শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা পর্যন্ত মিছিল করেন। ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে জাতীয় জাদুঘরের সামনের রাস্তা থেকে প্রতীকী লাশ নিয়ে মিছিল বের করেন তারা।

মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে গিয়ে মিনিট দুয়েক অবস্থান করলে পুলিশ সদস্যরা পুরো মিছিলটিকে ঘিরে রাখেন। পরে মিছিলটি টিএসসি এলাকার দিকে যাত্রা করে। মিছিলে ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার; শ্রমিক-ছাত্র ভাই ভাই, নিরাপদ সড়ক চাই; জাস্টিস, জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস; আইন করে হাফ পাস, দিতে হবে দিয়ে দাও’ স্লোগান দেওয়া হয়।

পরে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা মোহিদুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। দাবি আদায়ে আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মোমবাতি দিয়ে ‘আমরা নিরাপদ সড়ক চাই’ লিখব। সঙ্গে থাকবে প্রতিবাদী গানের আসরও। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় করেই আমরা ফিরব।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments