Sunday, September 14, 2025
Homeআন্তর্জাতিকবাংলাদেশবাংলাদেশিরা গভীর অনিশ্চয়তায়, ছুটছেন পোল্যান্ড সীমান্তের দিকে

বাংলাদেশিরা গভীর অনিশ্চয়তায়, ছুটছেন পোল্যান্ড সীমান্তের দিকে

রাশিয়ার হামলার পর ইউক্রেনে বসবাসরত বাংলাদেশিরা গভীর অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। তাদের অনেকে তাদের অনেকে পোল্যান্ড সীমান্তের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। তারা আশা করছেন, পোল্যান্ড তাদের আশ্রয় দেবে। গতকাল যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সমকাল ইউক্রেনে বসবাসরত তিনটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের মধ্যে দু’জন জানিয়েছেন, তারা পরিবার নিয়ে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকে পোল্যান্ড সীমান্তের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। তবে রাজধানীতে ভয়াবহ যানজটে পড়েছেন।

ইউক্রেনে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন। এদিকে, ঢাকায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ইউক্রেনে বসবাসরত বাংলাদেশিদের প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ডে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। পরে পোল্যান্ড থেকে বাংলাদেশিদের দেশে নিয়ে আসা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
‘স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পোল্যান্ড সীমান্তে যাচ্ছি’ :দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ইউক্রেনে বসবাস করছেন আবদুল আউয়াল। রাশিয়া এভাবে আক্রমণ করবে, তা আগে কখনও বুঝতে পারেননি। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার যুদ্ধ শুরুর পর তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে কিয়েভ থেকে পোল্যান্ড সীমান্তের উদ্দেশে রওনা দেন।

আউয়াল বলেন, ‘কিয়েভে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আমার মতো আরও অনেকে এখানে প্রতিষ্ঠিত। তবে রাশিয়ার আগ্রাসন আমাদের অনিশ্চিত জীবনে ঠেলে দিয়েছে। গতকাল যুদ্ধ শুরুর পর অনেকেই কিয়েভ ছেড়ে পালিয়ে যেতে শুরু করেন। সবার চোখে উৎকণ্ঠা, সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। তবে সবচেয়ে বড় দুর্ভাবনার বিষয় পরিবারের নিরাপত্তা।’

তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করেছিলাম, শেষ পর্যন্ত রাশিয়া আগ্রাসন থেকে বিরত থাকবে। সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। যুদ্ধের আশঙ্কা সত্ত্বেও আমাদের মতো অনেকেই কিয়েভ বা ইউক্রেন ছাড়তে চাননি। আসলে এভাবে হুট করে চলে যাওয়া সহজও ছিল না।’

তার মতে, কিয়েভে শ পাঁচেক বাংলাদেশি বাস করেন। পুরো ইউক্রেনে এই সংখ্যা হয়তো হাজারখানেক হবে। তাদের বেশিরভাগই আটকা পড়েছেন। অনেকে আর্থিক সংকটে ভুগছেন। বাংলাদেশি পরিবারগুলো তাদের কিছুটা সহায়তা করেছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

আউয়ালের পৈতৃক বাড়ি ঢাকার সাভারে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে তিনি দেশে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘কঠিন এই পরিস্থিতিতে দেশে স্বজনদের কথা বারবার মনে পড়ছে। তারাও আমাদের জন্য ভীষণ উদ্বিগ্ন। আশা করি, দ্রুতই এই অনিশ্চয়তার অবসান ঘটবে এবং আমরা নিরাপদে ফিরতে পারব প্রিয় মাতৃভূমিতে।’
‘সরকার যেন আমাদের পাশে দাঁড়ায়’ :বৃহস্পতিবার প্রত্যুষে হামলার শব্দ শুনে কিয়েভের বাসিন্দা মারিয়া হোসেন বুঝতে পারেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। পরে তারা কিয়েভ ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার স্বামী ও ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে পোল্যান্ড সীমান্তের উদ্দেশে রওনা দেন। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশি আরও একটি পরিবার রয়েছে।

সমকালকে তিনি জানান, কিয়েভ থেকে বাংলাদেশিদের মতো অন্যান্য দেশের নাগরিকরাও চলে যাচ্ছেন। তার ধারণা, অনেক ইউক্রেনীয় নাগরিকও একই পথ ধরেছেন। কিয়েভের রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট।

তিনি বলেন, তার স্বামী ইউক্রেনের নাগরিকত্ব পেয়েছেন, তাদের দুই সন্তানও সে দেশের পাসপোর্টধারী। তারা তাদের দুই সন্তানকে নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। তাদের কথা ভাবলে চোখে পানি ধরে রাখতে পারেন না। কথা বলার একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

পরে নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন, কিয়েভে তার চেনাজানা অনেক বাংলাদেশি পরিবার আছে। এখানে অনেক শিক্ষার্থীও আছে। তাদের অবস্থা বেশি খারাপ আর্থিক সংকটের কারণে। কিয়েভ থেকে পোল্যান্ড সীমান্ত প্রায় ৯০০ কিলোমিটার। এটা ইউরোপে খুব দীর্ঘ পথ নয়। কিন্তু এখন এই পথ পাড়ি দিতে কতক্ষণ লাগবে, তা একেবারেই অজানা।

মারিয়া বলেন, ‘দেশে আমাদের আত্মীয়-পরিজন চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। আমাদের বাড়ি ঢাকার সাভারে। পোল্যান্ডে নিরাপদে পৌঁছাতে পারলে আমরা দেশে ফিরতে চাই। বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমাদের বিনীত আবেদন, আপনারা সাধ্যমতো ইউক্রেনে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের পাশে দাঁড়ান। তাদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করুন।’

কিয়েভেই থাকতে চান খালেদ হাসান :ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ৩৮ বছর ধরে বসবাস করেন প্রবাসী বাংলাদেশি খালেদ হাসান খান। গতকাল বৃহস্পতিবার সমকালের সঙ্গে তার কথা হয়। রাশিয়ার হামলার পর কীভাবে কাটছে তাদের দিন, তা জানালেন তিনি।

খালেদ বলেছেন, ‘যুদ্ধ শুরুর পর আমাদের আর যাওয়ার জায়গা নেই। রাশিয়া আমাদের ওপর হামলা করেছে। মাথার ওপর দিয়ে মুহুর্মুহ উড়ে যাচ্ছে জঙ্গিবিমান। মাঝেমধ্যেই শুনছি বোমার গর্জন। জীবন বাঁচাতে আন্ডারগ্রাউন্ড ও বেজমেন্টে অথবা টেবিলের নিচে থাকছি। সেখানে চেনাজানা অনেকে মিলে নিদারুণ পরিস্থিতিতে গাদাগাদি করে আছি। জানি না, আমাদের কপালে কী আছে। মাতৃভূমি বাংলাদেশের মানুষের কাছে দোয়া চাই- যুদ্ধের এই বিভীষিকা যেন শেষ হয়, আমরা বাঁচতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘ভোরে ঘুম ভেঙেছে যুদ্ধের সাইরেন শুনে। তার পর থেকে দিশেহারা আমরা। পরিবার নিয়ে কিয়েভে থাকি। আমি ব্যবসা করি। একটি শোরুম আছে। দু-তিন মাস এমনিতেই কেনাবেচা নেই বললেই চলে। অন্যদেরও একই অবস্থা। বৃহস্পতিবার শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ও ব্যাংক খোলা ছিল। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে না গিয়ে ব্যাংকে গিয়েছিলাম কিছু টাকা হাতে রাখার জন্য। সেখানে উদ্বিগ্ন মানুষের দীর্ঘ লাইন। তাদের চোখমুখ দেখে মনে হলো- তারা যেন শেষবারের মতো ব্যাংকে এসেছে, আর হয়তো টাকার দরকার নাও হতে পারে।’

বিমর্ষ খালেদ জানান, বাংলাদেশে আমার বাড়ি টাঙ্গাইলে। পুরো দেশের মানুষের কাছে আমরা দোয়া চাই, যেন জীবন নিয়ে বেঁচে থাকতে পারি।’ তিনি কিয়েভেই থাকবেন বলে জানান।

পোল্যান্ডে যাওয়ার পরামর্শ :ইউক্রেনে বসবাসরত বাংলাদেশিদের প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ডে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। ইউক্রেন থেকে আসা বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জরুরি ভিত্তিতে কিংবা অন অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়ার জন্যও পোল্যান্ডকে অনুরোধ করা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেনে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সঙ্গে পোল্যান্ড দূতাবাস যোগাযোগ রাখছে। তারা এখন পর্যন্ত নিরাপদে আছেন। এরই মধ্যে দূতাবাস একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলেছে। সেখানে প্রায় আড়াইশ ইউক্রেন প্রবাসী বাংলাদেশি যুক্ত হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেনে পাঁচশর মতো বাংলাদেশি আছেন। বাকিরাও এ গ্রুপে যুক্ত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেনে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের নিজ উদ্যোগে পোল্যান্ডে আসতে হবে। পোল্যান্ডে বাংলাদেশিদের জন্য দুই সপ্তাহের ভিসা দেওয়া হতে পারে। তারপর পোল্যান্ড থেকে বাংলাদেশিদের বিশেষ ফ্লাইটে নিয়ে আসা হবে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও কথা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে ইউক্রেনে অবস্থিত বাংলাদেশিদের +৪৮৫৭২০৯৪৩৮১ নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। সুত্রঃ সমকাল

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments