Monday, September 15, 2025
Homeজাতীয়সামনে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ

সামনে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ

বৈশ্বিক চলমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতিকে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আগামীতে এই চ্যালেঞ্জের মাত্রা আরও বাড়বে। বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের প্রায় সব দেশকেই এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আগামীতেও করতে হবে।

দেশে মার্কিন ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা তথা টাকা অবমূল্যায়নে চাপ আরও বাড়বে। এর প্রভাবে বাড়বে মূল্যস্ফীতির চাপও। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে সরকারের খরচের মাত্রা বেড়ে যাবে। এর ফলে অর্থনীতিতে সরকারের খরচের ধাক্কা জোরালো হবে এবং এ কারণে সৃষ্ট সংকটকে আরও প্রকট করে তুলতে পারে। দেশ-বিদেশের সার্বিক অর্থনীতির হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বুধবার বিকালে প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে বিদ্যমান ও সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্থানীয় চাহিদার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে কঠোরতা আরোপ করা, প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখতে, ডলারের বিপরীতে টাকার মান স্থিতিশীল রাখতে এবং মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে রাজস্ব ও মুদ্রানীতির মধ্যে আরও সমন্বয় করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রণোদনা প্যাকেজগুলো চলমান রাখার কথা বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বিদ্যমান পরিস্থিতি ও আগামী চ্যালেঞ্জগুলোর জন্য চারটি কারণ শনাক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো-

১. রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট, ২. করোনা মহামারির বিরূপ প্রভাব, ৩. আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের প্রবাহ হ্রাস ও মূল্য বৃদ্ধি এবং ৪. মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগ্রাসী সুদ বাড়ানোর নীতি।

সূত্র জানায়, মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমস (ফেড) সাম্প্রতিক সময়ে দুই দফা সুদের হার বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে আরও এক দফা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। তারা সুদের হার বাড়ানোর কারণে বিশ্বব্যাপী ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। যে কারণে ডলারে বিনিয়োগ করছে বিশ্বের বড় বড় করপোরেট হাউজ ও ব্যাংকগুলো।

এ কারণে ডলারের চাহিদা এখন তুঙ্গে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এখন সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে ডলার। পণ্যের দাম বাড়ায় ডলারের চাহিদাও বেড়েছে। এর দাম বাড়ার কারণে বিশ্বের রপ্তানিকারকরা এখন ডলারে পণ্য রপ্তানি করছেন।

এতে তারা লাভবান হচ্ছেন। সব মিলে ডলারের চাহিদা বাড়ায় এবং বৈদেশিক বাণিজ্য ডলারকেন্দ্রিক হওয়ায় প্রায় সব দেশই এখন সংকটে পড়েছে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে বিকল্প মুদ্রায় লেনদেন বাড়ানোর জন্য অনেক দেশ বা অর্থনৈতিক অঞ্চল বা জোট থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও সেগুলো এখনো সফল হয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামীতে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি গতি আরও হ্রাস পেতে পারে।

কেননা মূল্যস্ফীতির হারে লাগাম টানতে অনেক দেশ এখন সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। এর নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্য দেশগুলোতেও পড়বে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্বব্যাপী এখন সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। ফলে টাকার প্রবাহ কমবে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি কমে যাবে। উন্নয়ন প্রকল্প হবে কম। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাবে। সব মিলে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা থাকবে। এর নেতিবাচক প্রভাব তো বাংলাদেশে পড়বেই। এর মধ্যে রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। একই সঙ্গে রেমিট্যান্সের গতি ধরে রাখাও চ্যালেঞ্জিং হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশেও সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। এর প্রভাবেও দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি কমবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী পণ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব, দেশের বাজারে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ানোর ফলে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আারও বেড়েছে। এতে অর্থনীতিতে টাকার অবমূল্যায়ন ও মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বাড়বে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল পণ্য আমদানি সীমিত করার পাশাপাশি বিদ্যুৎ সরবরাহে রেশনিং নীতি চালু করা হয়েছে। এতে জ্বালানি আমদানিজনিত চাপ কিছুটা হলেও কমছে। গত অর্থবছরের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত আমদানির চাপ ৭ শতাংশ কমেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পণ্যমূল্য বৃদ্ধি ও টাকার অবমূল্যায়নের কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। বাড়ছে মূল্যস্ফীতির হার। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন গ্রামীণ এলাকায় অনেক বেশি। এতে নিুআয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় আয়-ব্যয়ের প্রবণতা অসামঞ্জস্য হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ ব্যয় বেড়েছে, আয় কমেছে।

এতে বলা হয়, রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হওয়ায় ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতির উচ্চগতি ও তুলনামূলকভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারা কম হওয়ায় সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যা ডলারের ওপর চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

ডলারের বিপরীতে টাকার মানের অস্থিরতা সীমিত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে হস্তক্ষেপ করছে। গত জুন পর্যন্ত ৭৪০ কোটি ডলার বাজারে ছেড়ে বিনিময় হারকে সহনীয় রেখেছে। এ কারণে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। গত বছরের আগস্টে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলারে উঠেছিল। পরে তা কমতে থাকে। গত জুনে তা কমে ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে নেমে যায়। এখন তা আরও কমে ৩ হাজার ৬৮৫ কোটি ডলারে নেমেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়লেও সার্বিকভাবে টাকার প্রবাহকে সংকুচিত করা হয়েছে। এতে ব্যাংকিং খাতে তারল্য প্রবাহ কমেছে। কলমানির সুদের হার বেড়েছে। ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কেনার কারণে ব্যাংকের অনেক টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আটকে আছে। সেগুলো বিশেষ প্রয়োজন অনুযায়ী বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় ব্যাংকিং খাতে ছাড়া হচ্ছে।

শেয়ারবাজারে নিম্নমুখী প্রবণতার সঙ্গে কিছু অস্থিরতা প্রত্যক্ষ করা গেছে। যে কারণে মূল্যসূচক, বাজার মূলধন এবং টার্নওভারে মন্দা দেখা দিয়েছে। শেয়ারবাজারে কোম্পানিগুলোর দুর্বল পারফরম্যান্স ও পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে এ অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments