দুই দশক আগে ২০০৪ সালে একটি স্বাধীন সংস্থা হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যাত্রা শুরু করলেও সংস্থাটি দুর্নীতি দমনে ব্যর্থ হয়েছে। সংস্থাটির কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, দুদকের ব্যর্থতার কারণ দুর্নীতি দমনে এর চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের ‘সদিচ্ছার অভাব’।
দুদকের আইনগত ক্ষমতা কম নয়। জনবলের বিরাট ঘাটতি আছে, তা-ও বলা যাবে না। কিন্তু সংস্থাটি জন্মলগ্ন থেকেই, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে দুর্নীতি দমনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের বেশির ভাগ নিয়োগ পেতেন রাজনৈতিক বিবেচনায়, চলতেন ক্ষমতাসীনদের কথায়। এর আগেও এর ব্যতিক্রম খুব একটা ছিল না।
দুদকে কে নিয়োগ পাচ্ছেন, সেটাই বড় প্রশ্ন এখন। দুর্নীতি দমনে সদিচ্ছা থাকা দলীয় প্রভাবমুক্ত, সৎ ও দক্ষ ব্যক্তি পাল্টে দিতে পারেন দুদকের ভাবমূর্তি, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন বড় ভূমিকা। তাই দুদকে নিয়োগপ্রক্রিয়াতেই বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করছেন দুদক সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
কিন্তু সরকার দুদক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন তৈরির আগেই সংস্থাটিতে চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগের জন্য বাছাই বা সার্চ কমিটি গঠন করেছে। গত ২৯ অক্টোবর দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা (দুজন) পদত্যাগ করার পর ১০ নভেম্বর সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি প্রতিটি পদের দুজনের নাম প্রস্তাব করবে। রাষ্ট্রপতি সেখান থেকে নিয়োগ দেবেন।
প্রশ্ন উঠেছে, আগের প্রক্রিয়ায় একই মানদণ্ডে যদি দুদক গঠন করা হয়, তাহলে আবার সংস্কার কমিশন কেন? বর্তমান আইন অনুযায়ী নতুন কমিশনের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। তারপর কি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী দুদকে নিয়োগ হবে, সেটা কি যুক্তিসংগত ও বাস্তব?
এ বিষয়ে দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রাথমিকভাবে তাঁরা মনে করছেন, দুদকে কমিশনার নিয়োগপ্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসুক। কমিশনারের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব থাকতে পারে। কমিশনের মেয়াদ ও কমিশনারদের যোগ্যতার শর্তের বিষয়ে প্রস্তাব থাকতে পারে। এগুলো কমিশন গঠনের সঙ্গে সম্পর্কিত। তিনি আরও বলেন, দুদক সংস্কার কমিশনের কাজ শেষ হওয়ার আগে কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগ সম্পন্ন হলে তা এ বিষয়ে সম্ভাব্য সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, সে প্রশ্নও বিশেষভাবে বিবেচ্য। কারণ, সংস্কার কমিশনের পরিধির আওতাভুক্ত অন্য প্রায় প্রতিটি বিষয়ই ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনার জন্য নতুন কমিশনের ভূমিকা হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা পড়ার আগেই গঠন করা হয়েছে নির্বাচন কমিশন। অনেকেই মনে করেন, কমিশনটি ভালো হয়নি। পাঁচ সদস্যের এ কমিশনে তিনজনই প্রশাসন ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন, নূরুল হুদা কমিশন ও কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশনেও তিনজন ছিলেন প্রশাসন ক্যাডারের। নতুন সরকারও এ চর্চা থেকে বের হতে পারেনি।
এদিকে দুদক গঠন প্রক্রিয়াধীন। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। আপত্তি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটিও। গত ২৭ নভেম্বর তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, দুদক সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত কমিশনের কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় সংস্থাটিতে নিয়োগের জন্য বাছাই কমিটি করা অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাবিরোধী ও একটি অনভিপ্রেত পদক্ষেপ।