শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ

গাজীপুরে বেক্সিমকোর শিল্প পার্ক বন্ধ ঘোষণা করায় ১৬টি কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে অত্র কারখানাগুলোয় কর্মরত শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। বিক্ষোভ চলাকালীন এক পর্যায়ে শ্রমিকরা চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের চক্রবর্তী এলাকায় অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন।

গতকাল শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তারা এই অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এ সময় মহানগরীর সারাবো-চক্রবর্তী এলাকায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করেন। পরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ

এ সময় শ্রমিক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ারও ঘটনা ঘটে। আন্দোলনরত  শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে প্রায় সাত ঘণ্টা পর চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় ১০-১২ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন।

জানা গেছে, গতকাল সকাল ৯টার দিকে শ্রমিকরা চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের জিরানী ও চক্রবর্তী এলাকায় কাঠের গুঁড়ি ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। এছাড়া তারা আশপাশ থেকে ময়লা-আবর্জনা এনে সড়কে ফেলে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন। যার ফলে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়ে ওই সড়কে চলাচলকারীরা যাত্রী ও জনসাধারণ। সড়কটির দুই পাশে যানবাহন চলাচল সম্পুর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট।

খবর পেয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশ, কাশিমপুর থানার পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। দফায় দফায় শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কথা না শুনে আরো বেশি উত্তেজিত হয়ে উঠে সড়কের বিভিন্ন স্থানে কাঠ ও ময়লা-আর্বজনা ফেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে বাধ্য হয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে শ্রমিকরা সড়ক ছেড়ে চলে গেলে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোতে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক কাজ করে। গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে বেক্সিমকো শিল্প পার্কের ১৬টি কারখানা (তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্রয়াদেশ না থাকা এবং কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খুলতে না পারায়) বন্ধ ঘোষণা করেছে বেক্সিমকো গ্রুপ কর্তৃপক্ষ।

নাওজোড় হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলাম দৈনিক সচেতন বার্তাকে বলেন, “শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করায় ওই সড়কের উভয় পাশে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এতে ওই সড়কে চালাচলকারী যাত্রী ও জনসাধারণ দুর্ভোগে পড়েন।”

আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানায়, ৫ আগস্টের আগে পর্যন্ত তারা সময়মতো বেতন-ভাতা পেয়েছে। এখন কারখানায় কাজ নেই, কর্তৃপক্ষ মিথ্যা অজুহাতে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। কারখানা বন্ধ হওয়ায় হাজার হাজার শ্রমিক খুব কষ্টে দিন পার করছে। সংসারের খরচ চালাতে না পেরে তারা বিপাকে পড়েছে। বাড়িওয়ালারা বাসা ছেড়ে দিতে চাপ দিচ্ছেন। দোকানিরা বাকিতে আর নিত্যপণ্য দিচ্ছেন না। সামনে জানুয়ারি মাস। ছেলেমেয়েদের কিভাবে স্কুলে ভর্তি করাবেন ভেবে পাচ্ছে না তারা।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবু তালেব বলেন, “শ্রমিকরা কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করে। ফলে চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।”

ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে, কাশিমপুর  থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, “পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ধাওয়া দিয়ে শ্রমিকদের সরিয়ে দেওয়া হয়। ওই সড়কে বর্তমানে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here