জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি সোমবার সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসে দেশটির কার্যত শাসক আহমেদ আল-শারারার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দুই সপ্তাহ আগে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ার নতুন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে আঞ্চলিক নেতারা সক্রিয় হয়েছেন। তার অংশ হিসেবে জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফর।
সাফাদি বলেন, সিরিয়ার পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় আমরা আমাদের ভাইদের পাশে আছি। আমরা এমন একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল সিরিয়া চাই, যেখানে জনগণের অধিকার নিশ্চিত হবে এবং তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণের একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রক্রিয়া থাকবে।
এদিকে, কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোহাম্মদ আল-খুলাইফিও দামাস্কাসে পৌঁছেছেন। সম্প্রতি কাতার সিরিয়ায় ১৩ বছর পর তাদের দূতাবাস চালু করেছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি জানিয়েছেন, আল-খুলাইফি সিরিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করবেন।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান এবং আল-শারারা রোববার সিরিয়ার ঐক্য ও স্থিতিশীলতার ওপর জোর দেন। তারা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির ওপর থেকে সব আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাফাদি জানান, জর্ডান ও সিরিয়ার ৩৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের নিরাপত্তা দুই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, আমরা চাই আমাদের সীমান্ত সন্ত্রাসী সংগঠন, মাদক এবং অস্ত্র চোরাচালান থেকে মুক্ত থাকুক।
জর্ডান দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান দমনে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষ করে ক্যাপটাগন নামে একধরনের মাদকের চাহিদা উপসাগরীয় দেশগুলোতে ব্যাপক।
সিরিয়ার ওপর ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা প্রসঙ্গে সাফাদি বলেন, এটি সিরিয়ার সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ। ইসরায়েলের উচিত ১৯৭৪ সালের চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সিরিয়ার অঞ্চল থেকে সরে যাওয়া।
সিরিয়ার বর্তমান প্রশাসনের কূটনৈতিক স্বীকৃতির প্রচেষ্টা প্রসঙ্গে আল-জাজিরার সাংবাদিক হাশেম আহেলবারা বলেন, আল-শারারা জর্ডানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চান। সীমান্ত অঞ্চলে বহু গোত্রীয় সম্পর্ক রয়েছে, যা এ উদ্যোগকে সহজতর করতে পারে।
বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ায় আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের আগমন বেড়েছে। সম্প্রতি মার্কিন, ইউরোপীয় এবং সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশের কর্মকর্তারা আল-শারারার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
এদিকে, ইরান সোমবার জানিয়েছে, তারা সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, সিরিয়াকে সন্ত্রাসবাদের আশ্রয়স্থল হতে দেওয়া উচিত নয়। সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে তার জনগণ, কোনো বিদেশি হস্তক্ষেপ নয়।
সিরিয়ার ভবিষ্যৎ গঠনে এই আঞ্চলিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।