ঢাকা কলেজে ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে টায়ারে আগুন ও একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটিয়ে কলেজের সামনে সড়ক অবরোধ করা হয়েছে। এতে ওই এলাকায় তীব্র যানজট এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
কলেজের সামনে এক ঘণ্টার ব্যবধানে ৭টি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। তবে এই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও কলেজের আবাসিক শিক্ষার্থী ও পথচারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। আগামীকাল বৃহস্পতিবারও পদবঞ্চিতরা কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানা গেছে।
আজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত কলেজের প্রধান ফটকে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন পদবঞ্চিতরা। এতে দিনভর একমুখী সড়কে যানচলাচল বন্ধ হওয়ায় তীব্র যানজট তৈরি হয় সেখানে। পরে ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এর আগে দুপুরে মিরপুর সড়ক অবরোধ করে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসিরের কুশপুতুল পোড়ান।
নিউমার্কেট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহসেন উদ্দীন জানান, তারা চলে যায়, আবার সড়কে আসে। তারা সড়কে আসার পর রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এভাবেই চলছে। এরফলে যানজট তৈরি হয়েছে। আমরা সতর্ক আছি, আমাদের পুলিশ সেখানে আছে।
এদিকে আগের দিন (মঙ্গলবার) রাত ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার মধ্যে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা কলেজের প্রধান ফটক, মিরপুর রোডের একাধিক স্থানে এসব বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে পদধারী-পদবঞ্চিত কেউই ককটেল বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেননি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, পদবঞ্চিতদের বিক্ষোভের পরে কলেজের প্রধান ফটকের সামনে দুটি, নায়েমের গলি ও মিরপুর রোডে চারটি এবং ঢাকা কলেজের সামনে অবস্থিত ফিলিং স্টেশনের সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে কেউ হতাহত না হলেও লোকজন আতঙ্কিত অবস্থায় ছিল।
মঙ্গলবার বিকেলে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ঢাকা কলেজ শাখার ৩৬ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে। কমিটিতে কলেজের বাংলা বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী পিয়াল হাসানকে আহ্বায়ক এবং ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মিল্লাদ হোসেনকে সদস্য সচিব করা হয়। এ ছাড়া আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্যও এতে নির্দেশে দেওয়া হয়েছে। এরপরই বিক্ষোভ শুরু হয়।
কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদবঞ্চিত তারেক জামিল বলেন, ত্যাগীদের কমিটিতে রাখা হয়নি। ৫ আগস্টের পরে সুবিধাভোগীরা এতে স্থান পেয়েছে। তাই আমাদের বিক্ষোভ হয়েছে।
সড়ক অবরোধ ও টায়ার জ্বালানোয় জনদুর্ভোগ তৈরি হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা পাঁচ মিনিটের জন্য জ্বালাচ্ছি, এতে তেমন সমস্যা হচ্ছে না। আমাদের তো কেন্দ্রে বিষয়টা জানান দিতে হবে। আর অপরপাশে খোলা রেখেছি। তবে কালকে আমরা এটা খেয়াল রাখব যেন দুর্ভোগ না হয়।
পিয়াল হাসান ও মিল্লাদ হাসান বলেন, দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে দলের ত্যাগী নেতাদের পদায়ন করা হবে। আমরা কোনোভাবেই জনদুর্ভোগ করার পক্ষে নই। আমরা মীমাংসার চেষ্টা করছি।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির বলেন, সাংগঠনিক কাঠামোর কারণে আমরা সবাইকে প্রত্যাশিত পদে দিতে পারছি না। কিন্তু যারা প্রত্যাশিত পদ পাননি তারা যোগ্য নয় এমন না। পদবঞ্চিত হলে বা যথাযথ মূল্যায়ন না হলে সাংগঠনিক কাঠামো আছে, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা যাবে না।
যে নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে সেগুলো মাত্র ৪৫ দিনের জন্য সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি। এই কমিটির দায়িত্ব মূলত ৪৫ দিনের মধ্যে বর্তমান শিক্ষার্থীদের হাতে নেতৃত্ব হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আকার সেশন অনুসারে সমন্বয় করেই দ্রুত বৃদ্ধি করা হবে বলেও জানান নাসির উদ্দীন নাসির।
