গত শনিবার রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষকে টেনেহিঁচড়ে পুকুরের পানিতে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় ছাত্রলীগের আরও চার কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার গভীর রাতে তিনজনকে ও সোমবার সকালে একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এনিয়ে এ ঘটনায় নয়জনকে গ্রেফতার করা হলো।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- রাজশাহী মহানগরীর আসাম কলোনীর শাহ আলমের ছেলে মেহেদী হাসান হিরা (২৩), রবিউল ইসলামের ছেলে মেহেদী হাসান আশিক (২৩), সাধুর মোড় এলাকার নোমানের ছেলে নাবিউল উৎস (২০) এবং ছোটবনগ্রাম এলাকার খন্দকার আলমগীরের ছেলে নজরুল ইসলাম (২৩)। তারা সবাই পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস তাদের গ্রেফতারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। এনিয়ে অধ্যক্ষের দায়ের করা মামলায় মোট নয়জনকে গ্রেফতার করা হলো। জড়িত বাকিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এ ঘটনার তদন্তে আসা কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের গঠন করা কমিটির সদস্যরা ও পাশাপাশি ছাত্রলীগের গঠন করা কমিটির সদস্যরাও সোমবার সকালে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট আসেন। তারা শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন। যে পুকুরে অধ্যক্ষ ফেলা হয়েছিল, সেই পুকুরের গভীরতা মাপা হয়। কারিগরি শিক্ষা অধিফতরের কমিটির সদস্যরা প্রত্যেক শিক্ষকের বক্তব্য লিপিবব্ধ করেন। আর ছাত্রলীগের গঠন করা কমিটির সদস্যরা অধ্যক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন।
কারিগরি শিক্ষা অধিফতরের কমিটির প্রধান এসএম ফেরদৌস আলম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, পুকুরের যে স্থানে অধ্যক্ষকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল তা সেই স্থানে পানির গভীরতা পরিমাপ করেছেন। দেখেছেন সেখানে পুকুরের গভীরতা ১২ থেকে ১৫ ফুট। অধ্যক্ষ সাঁতার না জানলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতো। তদন্তে আরও বেশকিছু বিষয় তারা পেয়েছেন। তিনদিনের মধ্যে তদন্ত করে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। শেষ দিন মঙ্গলবারই তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।
এদিকে সোমবার ক্লাশ ও পরীক্ষা বর্জন করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবি, অধ্যক্ষের লাঞ্ছনার প্রতিবাদ করায় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ কারণে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ইনস্টিটিউটের মেকানিক্যাল পঞ্চম পর্বের ছাত্র মো. ইয়াসিন বলেন, শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর। সেই শিক্ষককে পানিতে ডুুবানো জাতির জন্য লজ্জা। তাই আমরা আন্দোলন করে প্রতিবাদ জানাচ্ছি, বিচার চাইছি। এ জন্য আমাদের বলা হচ্ছে ছাত্রদল, শিবির। আমরা কোনো রাজনীতি করি না, ক্যাম্পাসে রাজনীতি দেখতেও চাই না। আরেক শিক্ষার্থী শাওন হোসেন বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করছি বলে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এনিয়ে ছাত্রলীগের নেতারা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা যেন এ আন্দোলনে না আসে সে জন্য ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। ভয়ে অনেকে আন্দোলনে আসছে না। অনেকেই ফোন বন্ধ করে রেখেছে। আমরাও ভয়ের মধ্যে আছি।’
উল্লেখ্য, মিডটার্মে ফেল এবং ক্লাসে অনুপস্থিত থাকা পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের সদ্য বহিষ্কৃত যুগ্ম সম্পাদক কামাল হোসেন সৌরভকে ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে গত শনিবার অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহমেদের কার্যালয়ে গিয়ে চাপ দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে দুপুরে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার পর টেনেহিঁচড়ে ক্যাম্পাসের ভিতরের একটি পুকুরের পানিতে ফেলে দেওয়া হয়।
এই ঘটনায় শনিবার রাতে মামলা করেন অধ্যক্ষ। এতে সাতজনের নাম উল্লেখসহ ৫০ জনকে আসামি করা হয়। পরে রাতেই পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। আর ঘটনা তদন্তে কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রবিবার থেকেই তারা তদন্ত শুরু করেছেন।