কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে স্বেচ্ছ্বাচারিতার অভিযোগ এনেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তবে এক্ষেত্রে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. আলমগীর।
সোমবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা চলে আসছে, যা এতদসংক্রান্ত সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ও নির্বাচন কমিশন কার্যপ্রণালী বিধিমালা সমর্থন করে না।
তিনি বলেন, কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায় ৩৩৯টি শূন্যপদের বিপরীতে ৮৫ হাজার ৮৯৩ জন প্রার্থী অংশ নেন। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি ও উত্তরপত্র যাচাইয়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষদকে ৪ কোটি ৮ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এই অর্থ প্রধান নির্বাচন কমিশনার অনুমোদন করলেও কতজন পরীক্ষককে কীভাবে এই টাকা প্রদান করা হয়, তার কোনো হিসাব নির্বাচন কমিশনের কাছে নেই। এমনকি নিয়োগ কমিটির সদস্যবৃন্দ এ বিষয়ে অবহিত নন। কমিশন সচিবালয় পরীক্ষা সম্পর্কে কিছুই জানে না। পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের ধরণ বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ।
মাহবুব তালুকদার বলেন, আমি মনে করি, অভ্যন্তরীণ অনিয়মের কারণে এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। অনেক ক্ষেত্রে সচিবালয়ের কোনো দায়বদ্ধতা নেই, কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে প্রায় সর্বক্ষেত্রেই দায় বহন করতে হয়।
নির্বাচন কমিশন ও সচিবালয়ের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মাহবুব তালুকদার জানান, ১৪ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে তার অফিসকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় নির্বাচন কমিশনাররা অভিযোগ করেন যে, কমিশন সচিবালয় কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা সংক্রান্ত ও অর্থ ব্যয় সম্পর্কিত বিষয় কমিশনকে কোনো পর্যায়েই অবহিত করেনি।
ওই বিষয়টি প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদাও সমর্থন করেন জানিয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, স্বাভাবিক কারণেই নির্বাচন কমিশনাররা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে একটি ইউও নোটের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কার্যাদির বিষয়ে কমিশনের এখতিয়ার সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন।
এদিকে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে চার নির্বাচন কমিশনারের সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর।
তিনি বলেন, কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়টি নির্বাচন কমিশনারদের ‘অবগত’ করার বিষয় নয়।
চার নির্বাচন কমিশনার অভিযোগ উত্থাপনের পর সোমবার নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে নিজের জবাব দেন আলমগীর।
সচিব বলেন, এটা হানড্রেড পার্সেন্ট আইনসম্মত। সংবিধান, আইন, বিধি ও নিয়মকানুন ফলো করে করা হয়েছে। এ নিয়োগে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি।
এর আগেও একইভাবে নিয়োগ হয়েছে বলে জানান তিনি। বিষয়টি তো কমিশনারদের কাছে যাওয়ারই কথা নয়, বাইপাস হলো কীভাবে? উল্টো প্রশ্ন রাখেন সচিব।
তিনি বলেন, মাননীয় কমিশনারবৃন্দ যেমন বলেছেন, কমিশনকে বাইপাস করে দেওয়া হয়েছে এটা। তাহলে উত্তর দিতে পারলাম, এটা কমিশনে যাওয়ার বিষয় নয়। আমরা আইনে দেখিয়ে দিলাম, এটা কমিশনের কাছে যায় না।
আলমগীর বলেন, ইসির সার্বিক নিয়ন্ত্রণ সিইসির কাছে ন্যস্ত থাকবে এবং সচিব ইসি সচিবালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্ব দেখবেন। আইনের পুরোটাই পড়তে হবে …সিইসি যদি প্রয়োজন মনে করেন, কোনো কিছু জানানোর দরকার হলে উনিই কমিশনকে জানাবেন। সচিব জানানোর কিছু নেই।
সচিব বলেন, কমিশনে কোনো দ্বন্দ্ব আছে বলে আমার জানা নেই। আমি সচিব হিসেবে সেটা ফিল করি না। এটা হয়ত বা মাননীয় নির্বাচন কমিশনার মহোদয়রা কেন বলেছেন, তারাই ভালো বলতে পারবেন। আমি তো ডিটেইল বলে দিলাম।
নির্বাচন কমিশনারদের ইউও নোট এর ব্যাখ্যাও প্রস্তুত করছেন সচিব।
তিনি বলেন, সিইসির কাছে উনারা দিয়েছেন। সিইসি মহোদয় আমাকে বলেছেন- এ বিষয়ে আইন-কানুন যা আছে সব নিয়ে এ নিয়োগের বিষয়ে স্ট্যাটাস পেপারসহ আমাদের কাছে জমা দেন। সিইসি মহোদয় যদি প্রয়োজন মনে করেন, কমিশনার মহোদয়ের কাছে উপস্থাপন করবেন, আলোচনা করবেন।
মো. আলমগীর বলেন, আমার নিয়োগকালীন সময়ে আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি; স্বচ্ছ্বতার কোনো অভাব আছে বলেনি; গণমাধ্যম, দল, নেতা, জনগণ, কর্মকর্তা-কর্মচারী কেউ করেনি। ফল দেওয়ার পর ছয় দিনেও অভিযোগ করেনি।
স্বেচ্ছ্বাচারিতার অভিযোগের বিষয়ে সচিব বলেন, এ অভিযোগ আগে আসেনি।