বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আসলে দুর্নীতির
মহাসড়কে এই সরকার হাঁটছে বলেই সাধারণ মানুষের এত লাশের স্তূপ। কারণ মানুষ
হত্যার জন্য ব্যয়বহুল আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে কিন্তু মানুষ বাঁচানোর
জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতির কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। গতকাল শনিবার সকালে
এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অন্তর্নিহিত চেতনাই ছিল
গণতন্ত্র; কিন্তু ক্ষমতাসীন দল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে গণতন্ত্র মুছে
দিয়ে বাকশাল অন্তর্ভুক্ত করেছে। আর বাকশাল হচ্ছে জনগণকে খোয়াড়ে বন্দী করার
ব্যবস্থা। তিনি বলেন, যে সরকার দাবি করে মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠিয়ে মহাকাশ
জয় করেছে, অথচ মানুষ বাঁচানোর জন্য সেই সরকারের কোনো আগ্রহ নেই। দেশের জনগণ
মনে করে আগুনে পুড়ে মানুষগুলো মরার দায় বর্তমান সরকারের। যারা মধ্যরাতে
ভোট করে তারা গণবিরোধীই হয়। সে জন্য মানুষ বাঁচাতে তারা কোনো দায়বোধ করে
না। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
খালেদা
জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গ : লিখিত বক্তব্যে রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ^াসী। অথচ তার সেই চেতনায় গণতন্ত্র
অনুপস্থিত। তিনি এখন চেতনা সন্ত্রাসে গণতন্ত্রকে দুরমুস করা এবং
গণতান্ত্রিক শক্তির প্রতীক বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী করে রেখেছেন। তার ওপর চালানো হচ্ছে
পরিকল্পিত নিষ্ঠুর নির্যাতন; যাতে তিনি বিনাচিকিৎসায় দুনিয়া হতে চলে যান।
বিএসএমএমইউর প্রোভিসি, বিএমএর মহাসচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত
মহাপরিচালক এবং আরো একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গণমাধ্যমে বলেছেন ‘বেগম খালেদা
জিয়ার যে শারীরিক অবস্থা তাতে যেকোনো সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তার
স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ এবং খুবই উদ্বেগজনক।’ তারা সবাই
বেগম জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা দেয়ার সুপারিশ করেছেন। অথচ সরকার দেশনেত্রীর
জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তাকে সুকৌশলে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়ে গণতন্ত্র
বিনাশী ভয়ঙ্কর একদলীয় শাসন বাকশাল প্রতিষ্ঠার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। আমরা
আবারো দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাইÑ এই মুহূর্তে দেশনেত্রী বেগম খালেদা
জিয়াকে মুক্তি না দিলে রাজপথ শূন্য ও আওয়াজহীন থাকবে না। অধিকার বঞ্চিত
মানুষ প্রতিরোধ-প্রতিশোধের আগুনে ফুঁসছে। যেকোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে যাবে
এবং জনতার ঢল ধেয়ে গিয়ে উল্টে দিবে ক্ষমতাসীনদের সিংহাসন।
অগ্নিকাণ্ডের
ক্ষতিপূরণ দাবি : রিজভী বলেন, একটি ভবনের ধোঁয়া অপসারিত হতে না হতেই
আরেকটি উঁচু ভবনের অগ্নিকুণ্ডের ধোঁয়া সারা আকাশে বিস্তার লাভ করেছে। একটি
শোক কাটতে না কাটতেই আরেকটি গভীর শোক আমাদের আচ্ছন্ন করছে। দেশবাসী যেন
একটা বিশাল বিস্তৃত গোরস্থানের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। চকবাজারের
চুড়িহাট্টায় মর্মস্পর্শী মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতেই বনানীর এফ আর
টাওয়ারের আগুনে পুড়ে মৃত্যুর ট্র্যাজেডি দেশবাসীকে শোকে বেদনায় নির্বাক করে
দিয়েছে। স্বজন হারানোর বেদনায় মানুষ আর্তনাদ করছে। আমি এফ আর টাওয়ারে
ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে নিহত ২৫ জনের জন্য গভীর শোক ও তাদের শোকাহত
পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। হতাহতদের পরিবারগুলোকে যথোপযুক্ত
ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় প্রতিদিনই প্রায়
৫০ জনের মতো মানুষের তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। আগুনের কাছে, বেপরোয়া গতিতে
চলা যানবাহনের কাছে, ফিটনেসবিহীন লঞ্চ ও বাসের কাছে মানুষ পণবন্দী হয়ে
পড়েছে। একটা জবাবদিহিবিহীন সরকার থাকার কারণেই থামছে না মৃত্যুর মিছিল।
ফায়ার
সার্ভিস আধুনিক নয় : রিজভী বলেন, এফ আর টাওয়ারে অগ্নিনির্বাপন ও হতাহতদের
উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসসহ উদ্ধারকর্মীরা প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়েছেন,
তাদের আমরা আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আগুন নেভাতে ও মানুষ উদ্ধারে সরকার
আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আধুনিক যন্ত্রপাতি
ও দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়ার কোনো লেটেস্ট ডিভাইস নেই। দুর্ঘটনা স্থলে
উদ্ধারকর্মীদের দ্রুত পৌঁছানোর জন্য কোনো উন্নতমানের বিকল্প ব্যবস্থা নেই।
আগুন নেভাতে উন্নত ও স্বয়ংক্রিয় মই পর্যন্ত নেই। সবই সেকেলে ও মান্ধাতার
আমলের।
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, অথচ গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে দমন
করার জন্য কত যে আধুনিক মারণাস্ত্র নিয়ে আসা হয়েছে তার শেষ নেই। আনা হয়েছে
সর্বাধুনিক বিপজ্জনক টিয়ার শেল, স্মোক গ্রেনেড, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার
বুলেট, গোলমরিচ-স্প্রেসহ নানা ধরনের আধুনিক অস্ত্র। বিএনপিসহ বিরোধী দলকে
নিশ্চিহ্ন করার জন্য, মানুষ হত্যার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে ৩০ হাজার আধুনিক
মারণঘাতী ১২ বোর শর্টগান। আবার শর্টগানের জন্য ৩০ লাখ কার্তুজ আমদানি করা
হয় হাজার কোটি টাকা শ্রাদ্ধ করে। নির্যাতনের জন্য আনা হয়েছে ইলেকট্রিক
চেয়ার ও শক দেয়ার অত্যাধুনিক ডিভাইস। বিরোধী দলের ফোনে আড়িপাতার জন্য
বিশে^র সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত যন্ত্রপাতি নিয়ে আসা হয়েছে। গোপনে
অডিও-ভিডিও করতে উন্নতমানের ডিভাইস নিয়ে আসা হয়েছে। বিভিন্ন বাহিনীকে
হেলিকপ্টার দেয়া হয়েছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে।