Monday, September 15, 2025
Homeজাতীয়আইন আদালত‘জয় বাংলা’ জাতীয় স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করা উচিৎঃ হাইকোর্ট

‘জয় বাংলা’ জাতীয় স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করা উচিৎঃ হাইকোর্ট

এ সংক্রান্ত একটি রিট মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেলসহ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের মত শুনে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ অভিমত দেয়।

আদালতে রিটকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী বশির আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

আবেদনটির বিষয়ে এদিন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, আব্দুল মতিন খসরু, সুপ্রিম আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিনের বক্তব্য শোনে আদালত।

রিট আবেদনকারী আইনজীবী বশির আহমেদ বলেন, “জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জয়বাংলা বলে ৭ মার্চের ভাষণ শেষ করেছিলেন। তাই জয় বাংলাকে রাষ্ট্রীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করার আবেদন করেছি। প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর বক্তব্যে ও শপথের শেষে জয়বাংলা উচ্চারণ করার নির্দেশনা চেয়েছি রিট আবেদনে।

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন পরে সাংবাদিকদের বলেন, “জয় বাংলা ছিল আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূলমন্ত্র। যে স্লোগান দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছেন, জীবন দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন সেটাকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে ‘জাতীয় স্লোগান’ হিসেবে ব্যবহার করা হোক।”

অনেক দেশেই এ ধরনের জাতীয় স্লোগান আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের আইনজীবী মহলেরও এটা দাবি; এটা নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। সুতরাং জয় বাংলা স্লোগানকে সংবিধানে সন্নিবেশিত করে জাতীয় স্লোগান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বলেছি। যে দুই বিচারপতি শুনেছেন তাদের দুজনেই মুক্তিযোদ্ধা। আশা করি তারা পর্যালোচনা করে রায় দেবেন।”

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, “আমাদের বর্তমান সংবিধানে ১৫০ অনুচ্ছেদ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটিকে সংবিধানের অংশ করে নেওয়া হয়েছে। সেই ভাষণের শেষ অংশ হচ্ছে জয় বাংলা। সুতরাং সংবিধান অনুযায়ী জয় বাংলা আমাদের সংবিধানের অংশ। তাই জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করা উচিৎ। আমরা মনে করি অবশ্যই এটা আইনে পরিণত হবে।”

সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু বলেন, “একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে দলমত নির্বেশেষে সবার হৃদয় উৎসারিত স্লোগান ছিল জয় বাংলা। আমরা আশা করি রিট আবেদনকারীর পক্ষে, জয় বাংলার পক্ষে আদালত রায় দেবেন।”

প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জয়বাংলা উচ্চারণ করে অ্যাসেম্বলি শেষ করার নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে এই রিট আবেদনে।

শুনানির পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার সাংবাদিকদের বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমরা বলেছি, সংবিধানের ৩ ও ৪ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রভাষা বাংলা, জাতীয় প্রতীক, জাতীয় সংগীত আছে, কিন্তু জাতীয় স্লোগান নেই। সংবিধানের ৫০ (২) অনুচ্ছেদ অনুসারে ৭ মার্চের ভাষণটি যেহেতু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, ফলে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদনকারীর আবেদনকে লিখিতভাবে সমর্থন করেছে।

আজকে শুনানি করে আদালত বলেছেন, “সামনে ১৬ ডিসেম্বর আছে বা পরবর্তীতে যেসব জাতীয় দিবস আছে, প্রত্যেকটি দিবসে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বস্তরের প্রত্যেক দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে ভাষণ বা বক্তব্যের শুরু এবং শেষে জয় বাংলা স্লোগান দিতে হবে।”

আগামী ১৪ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির তারিখ রাখা হয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, “আজ সিনিয়র আইনজীবীদের মতামত আদালত নিয়েছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাবমিশন রেখেছেন। সবার আইনগত সাবমিশন এবং ব্যাখ্যা বিচার বিশ্লেষণ করে আদালত অবশ্যই পরবর্তীতে একটি আদেশ দেবে।”

‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণার আর্জি জানিয়ে দুই বছর আগে হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বশির আহমেদ। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর হাই কোর্ট রুল জারি করে। রুলে ‘জয়বাংলাকে কেন ‘জাতীয় স্লোগান ও মূলমন্ত্র’ হিসেবে ঘোষণা করার নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব এবং শিক্ষা সচিবকে ওই রুলের জবাব দিতে বরা হয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments