Monday, September 15, 2025
Homeঅন্যান্যডাচ বাংলায় ৫০ হাজার টাকা জমা দিতে চার্জ ৫৭ টাকা

ডাচ বাংলায় ৫০ হাজার টাকা জমা দিতে চার্জ ৫৭ টাকা

দৈনিক সচেতন বার্তার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন-২
ব্যাংক ব্যবসা প্রকৃত প্রস্তাবে সেবা-ব্যবসা। আমানতকারীর অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে যে লাভ অর্জিত হয় তা পরিচালন-খরচ, সঞ্চিতি এবং আয়কর প্রদানের পর অবশিষ্ট একটি অংশ লভ্যাংশ হিসেবে ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
আজকের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে যে ব্যাংকের সেবা প্রদান যত ভালো, সে ব্যাংকের ব্যবসার প্রসার সেভাবে নন্দিত। সেবার মানের উন্নয়নের জন্য ব্যাংকগুলো এখন প্রযুক্তি-নির্ভর।
ডাচ বাংলা ব্যাংক বর্তমানে তিন কোটি ২১ লাখেরও বেশি গ্রাহক নিয়ে বাংলাদেশে ব্যবসা করছে। সম্প্রতি অভিনব পন্থায় গ্রাহকদের একাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে। অতি সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাংকটির বিভিন্ন দুর্নীতি, গ্রাহক হয়রানি ও টাকা আত্মসাতের বিষয়ে একাধিক প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।
তাছাড়াও শত শত অভিযোগের তথ্যে প্রতিবেদন হরহামেশায় হচ্ছে। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে চোখ বোলালেও বুঝতে বাকী থাকেনা এই ব্যাংকের সেবার মানের বেহাল দশা। গত ২০শে জুন ফেসবুকের ‘পাবলিক সার্ভিস হেল্প গ্রুপ’ পেইজে Md.Habibur Rahman সাহায্য চেয়ে একটি পোস্ট করেছেন। তিনি ২২ শে জানুয়ারী ডাচ বাংলা ব্যাংকের ফাঁস্ট ট্র্যাক থেকে টাকা তুলতে গিয়ে ২০ হাজার টাকার জায়গায় পেয়েছে এক হাজার টাকা। তখনই তিনি সেখানে থাকা কর্মকর্তাকে জানায় এবং তাঁর বলামতো ১৬২১৬ নাম্বারে অভিযোগও জানায়। ছয় মাসে তাঁর হয়রানির বিবরন দিয়ে বলে এখন ব্যাংক বলছে আমি ২০ হাজার টাকাই বুথে পেয়েছি! এখন টাকাটা কিভাবে সে পেতে পারে, সেই সাহায্য চেয়েছে।
ডাচ বাংলা ব্যাংকের বুথে টাকা তুলে পাওয়া যায় ৫০০ টাকার নোটের ভিতরে ১০০ টকার নোট। জাল টাকা পাওয়ার অভিযোগের তো অন্ত নাই। এজেন্ট কতৃক অর্থ আত্মসাত এমনকি ২০১৬ সালে একাউন্ট থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকের এম ডি সহ চার উর্ধতন কর্মকর্তাকে আসামী করে মামলাও হয়।
প্রতারনা, অর্থ আত্মসাত, সেবার বিপরীতে অতিরিক্ত চার্জ আদায়, এতো অভিযোগ, এতো কিছুর পরেও অতি সম্প্রতি ব্যাংকটি এই অর্থনৈতিক মন্দার বাজারেও শেয়ার হোল্ডারদের ৩০ শতাংশ লভ্যানংশ ঘোষণা করেছে যা বাংলাদেশে ব্যাংক হিসেবে এই প্রথম! ব্যাবসায় এই সফলতার কি কারন?
অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিযোগিতার এই বাজারে অন্যান্য ব্যাংকগুলো যেখানে সেবার মান উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তি নির্ভর হচ্ছে, তখন ডাচ বাংলা ব্যাংক প্রযুক্তি নির্ভর হয়েছে সেবার বিষয়কে প্রাধান্য দিতে নয় মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে। প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে তারা একসময় দেশে বহু এটিএম বুথ তৈরি করে। তখন এটিএম ব্যবহারে ফি সংক্রান্ত সরকারী কোন নির্দেশনা না থাকার সুযোগে ইচ্ছেমতো ফি আদায় করে শত কোটি টাকা মুনাফা করে।
পরবরর্তীতে সরকার ফি নির্ধারণ করে দিলে সেই মুনাফা অর্জনে ধস নামে। যেহেতু সেবার মান দিয়ে গ্রাহক সংগ্রহ করা ব্যাংকটির পক্ষে সম্ভবপর নয় ফলে ভিন্ন কৌশলের অবলম্বনে ঢাকা শহরের আনাচে কানাচের প্রত্যেকটি গার্মেন্টস শ্রমিকদের গ্রাহক বানায় ব্যাংকটি। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সকল সদস্যকেও গ্রাহক বানাতে সক্ষম হয়। বর্তমানে সেই গ্রাহকদের প্রতারিত করেই করছে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন।
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন-১ এ উল্লেখিত প্রতারনার শিকার ব্যবসায়ীর একাধিবার পস ট্রাঞ্জেকশান ডিক্লাইন হয় কিন্তু একাউন্ট থেকে উল্লেখিত পরিমান টাকা কেটে নেয়। তিনি ১৬২১৬ নাম্বারে অভিযোগ জানালে ব্যাংকের প্রতিনিধিও তাদের দোষ স্বীকার করে। প্রতিবেদনের সাথে প্রতিনিধির সাথে গ্রাহকের কথোপোকথন এর রেকর্ড দেওয়া হয়েছে। সেই কেটে নেওয়া টাকা গুলো পরবরর্তীতে আর একাউন্টে ফেরত দেওয়া হয়নি।
ডাচ বাংলা ব্যাংক ৫০ হাজার টাকা একাউন্টে জমা হিসেবে গ্রহনের জন্য অনলাইন চার্জ নেয় ৫০ টাকা ৫৭ পয়সা! গ্রাহকের ব্যাংক একাউন্টের তথ্য বিবরণীতে দেখা যায় বছর শেষ না হতেই নভেম্বর মাসের প্রথমেই তাঁর একাউন্ট থেকে এটিএম নেটওয়ার্ক ফি ২৫০ টাকা, ডেবিট কার্ড রিনোয়াল ফি ৪৬০ টাকা কেটে নিয়েছে ব্যাংক। দেখা যায়, মাস্টার্ড ডেবিট কার্ডের জন্য নিয়েছে ৮৬২ টাকা, পস ট্রানজেকশান হিসাবে ফেব্রুয়ারীতে ১০০ টাকা আবার এপ্রিলে কেটে নেয় ৮০ টাকা। একাউন্ট মেইনটেন্স ফি হিসাবে কাটে ৩৪৫ টাকা।
গত ৩রা ফেব্রুয়ারী রাত ১০টা পর্যন্ত রাজধানীতে ডাচ বাংলা ব্যাংকের কোন বুথ থেকে গ্রাহকেরা টাকা তুলতে পারেনি। শুধু তাদের বুথ থেকেই নয়, অন্য কোন ব্যাংকের বুথ থেকেও ডাচ বাংলার কোন গ্রাহক টাকা তুলতে পারেনি। সেদিন রাজধানীতে বুথ গুলোর সামনে অনেককেই অসহায়ের মত অপেক্ষা করতে যায়। অনেকেই সচেতন বার্তার অফিসে ফোন দিয়ে অভিযোগ করলে ব্যাংকটির ওয়েবসাইটে দেওয়া নাম্বার ০২-৯৮৩০৮৯৮ নাম্বারে ফোন দিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়া মাত্রই লাইন কেটে দেয়। কোন ধরনের পূর্ব নোটিশ ছাড়াই এ ধরনের গ্রাহক হয়রানির কারন জানতে চেয়ে মেইল করা হয়। যার কোন জবাবও ব্যাংকটি দেয়নি।
গ্রাহকের একাউন্ট তথ্য বিবরনীতে দেখা যায়, জুন/২০১৯ মাসে এটিএম বুথে ১০ টি ট্রানজেকশান এর ক্ষেত্রে ৫ টি ট্রানজেকশানই প্রথমবার ডিক্লাইন হয়, দ্বিতীয় চেষ্টায় টকা উত্তোলোন করা সম্ভব হয়।
ভিডিও চিত্র দেখে সাভাবি্ক ভাবেই মনে হবে এটা কোন গরুর হাট। এই এটিএম ও ফাস্ট ট্রাকের দায়িত্বে থাকা কর্মরত প্রতিনিধির কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, নিয়মানুযায়ী ওই বুথে ২ জন কর্মকর্তা ও ২ জন গার্ড থাকার কথা। কতৃপক্ষের কাছে একাদধিকবার আবেদন জানিয়েও লাভ হয়নি। কর্মকর্তা হিসাবে তিনি একা এবং একজন গার্ড হওয়ায় গ্রাহক গার্মেন্টস কর্মীদের নিয়ন্ত্রন করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।
এতেই বোঝা যায়, ব্যাংকটি কৌশলে গ্রাহক যোগাড়ে সক্ষম হলেও ব্যয় সংকোচন রাখার নীতি অবলম্বন করে গ্রাহকের সেবা প্রদানে একদিকে যেমন লোকবল বাড়ায়নি অপরদিকে প্রযুক্তির সক্ষমতাকেও যথাযথভাবে বাড়ায়নি। টাকা বাঁচাতে পায়রেসি সফটওয়ার ব্যবহার করে কাজ চালাতে গিয়েই কিছুদিন আগে বুথ হ্যাক হওয়ার ঘটনাও ঘটে। সে কারনেই তাদের অনলাইন সিস্টেমে গ্রাহকের ভোগান্তির নেই কোন অন্ত। আর প্রযুক্তি ফল্টের দোহাই দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে গ্রাহকের টাকাও।
প্রথম পর্বের প্রতিবেদনের মন্তব্যে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, লুটেরা খ্যাতি অর্জনকারী এই ব্যাংকের কূকর্মগুলো দেখার জন্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কি কেউ নেই? আবার কেউ বলেছেন, ব্যবহারকৃত সফটওয়্যারগুলোর অরিজিনালিটি না থাকা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রযুক্তি নিরীক্ষকের অপ্রতুলতা ও প্রয়োজনমাফিক নজরদারির মধ্যে না থাকার জন্যই দিনের পর দিন ব্যাংকটি গ্রাহকদের সাথে এভাবে প্রতারণা, ভোগান্তির সূযোগ পাচ্ছে।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments