Monday, September 15, 2025
Homeরংপুরকুড়িগ্রামশিশু-সন্তানকে অথৈই পানিতে ফেলে দিলেন মা

শিশু-সন্তানকে অথৈই পানিতে ফেলে দিলেন মা

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের কাশিমবাজার সংলগ্ন একটি ব্রিজ থেকে অথৈই পানিতে কোলের শিশুকে ফেলে দিলেন এক মা। পানিতে পড়ে ১৫ মাসের ওই শিশুটি ভাসতে থাকে অনেকক্ষণ। পরে পথচারী এবং এলাকাবাসী শিশুটিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে।

শিশুটি এখন স্থানীয় রফিকুল ইসলাম এবং এলিনা দম্পতির কাছে রয়েছে। এলিনা শিশুটিকে তার বুকের দুধও পান করিয়েছেন। শিশুটি এখন সুস্থ আছে। তবে শিশুটির মা জমিলা বেগম শিশুটিকে ফেলে দিয়েই নিজ বাড়িতে পালিয়ে যায়।

জমিলা বেগমের দাবি, এক বছর আগে দুই মাসের সন্তান জাহিদকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি রংপুর থেকে বিতাড়িত হয় সে। পরে উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের পূর্বকেদার গ্রামের দরিদ্র পিতা জয়নাল মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। দিনমজুর বাপের বাড়িতে অভাব-অনটন থাকায় তার সন্তানের ভরণপোষণ নিয়ে প্রায়ই দ্বন্দ্ব হতো। সন্তানের খাবার এবং খরচ চালাতে মাঝে মধ্যে তাকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হতো। এসব থেকেই সন্তানকে পানিতে ফেলে দেয়ার চিন্তা আসে তার।

জমিলার পিতা জয়নাল জানান, সকালে আমি ও আমার ছেলে মাটি কাটতে এসেছি। মাটিকাটার স্থানের অদূরে মানুষের কোলাহল শুনে জানতে পারলাম আমার মেয়ে জমিলা তার ছেলে জাহিদকে পানিতে ফেলে দিয়েছে। কী কারণে এরকম কাজ করল তা আমি জানি না।

তিনি আরও জানান, দুই বছর আগে রংপুরের মডার্ন মোরের ভর্ত কবিরাজের ছেলে হাফিজুলের সঙ্গে জমিলার বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের এক বছর পরেই দুই মাসের কোলের শিশুকে নিয়ে সংসার ভাঙ্গে জমিলার। এ সময় জাহিদকে নিয়ে তার বাড়িতে ফিরে আসে জমিলা। এদিকে তিন সন্তান নিয়ে বড় মেয়ে জরিনা তার সংসারে ফিরে এসে মাথার বোঝা হয়ে আছে আগেই।

সব মিলিয়ে নয় সদস্যের পরিবারে ভরণপোষণ অসাধ্য হয়ে উঠে জয়নালের। দিনমজুরি করে এ বিশাল সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে।

জমিলার মা জবেদা বেগম জানান, প্রায়ই জমিলার সন্তান নিয়ে পরিবারে অশান্তি লেগে থাকতো। তার খরচ চালাতে চাইতো না জমিলার বাবা।

জমিলার বৃদ্ধা নানি সুফিয়া বেওয়া জানান, তার ভিক্ষাবৃত্তির চাল দিয়ে মাঝে মধ্যে জমিলার সন্তানের খরচ চলতো। তবে জমিলা তার সন্তানের জন্য অনেক নির্যাতন সহ্য করেছে। এসব নির্যাতন থেকে বাঁচতে আজকে সন্তানকে পানিতে ফেলে দিয়েছে।

প্রতিবেশীরা জানান, শুক্রবার জমিলা দুই কেজি চাল সবার আড়ালে বিক্রি করে শিশুর জন্য খাবার ও তেল সাবান কিনে আনলে তার বাবা রাগান্বিত হয় এবং জমিলাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে। মনের দুঃখে অবুঝ শিশুকে নিয়ে হতাশ জমিলা বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কাশিমবাজার সংলগ্ন একটি ব্রিজের ২০ ফিট নিচে অথৈই পানিতে ফেলে দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শী দুলাল হোসেন সন্তোষ জানান, সকাল ৯টার দিকে বাড়ি থেকে তিনি ওই পথে বাজারে যাচ্ছিলেন। এ সময় ব্রিজটির উপরে উঠলে একটি নারীকে কিছু পানিতে ফেলতে দেখে। কিছু পড়ার শব্দ শুনে নিচে তাকিয়ে দেখে একটি শিশু পানিতে ভাসছে এবং হাত-পা নাড়াচ্ছে। দিগ্বিদিক না তাকিয়ে তিনি চিৎকার করতে থাকেন। তার চিৎকারে স্থানীয় ফরিদুল ইসলাম এবং একজন পথচারী এগিয়ে আসেন। ব্রিজ থেকে নেমে পানি সাঁতরিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে তারা।

তিনি জানান, শিশুটিকে উদ্ধার করতে তাদের ২০ মিনিট সময় লাগে। এ সময় ধরে শিশুটি পানিতে ভাসতে থাকে। উদ্ধারের পর আগুন জ্বালিয়ে তাপ দিয়ে শিশুটিকে সুস্থ করা হয়। এ সময় ব্রিজের পাশের বাড়ির রফিকুল ও এলিনা বেগম দম্পতি শিশুটিকে হেফাজতে নেন।

এলিনা বলেন, শিশুটিকে তার বুকের দুধ খাওয়ানো হয়েছে। শিশুটিকে তিনি লালন পালন করতে চান।

বলদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান জানান, শিশুটি আপাতত রফিকুল ও এলিনা বেগম দম্পতির কাছে রয়েছে। তাকে তার মায়ের কাছে ফেরত দেয়া হবে।

ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা জানান, বিষয়টি আমি কিছুক্ষণ আগে জানতে পেরেছি। চেয়ারম্যানকে ফোন দিয়েছিলাম, খোঁজখবর নিয়ে ওই পরিবারকে সহযোগিতা দেয়া হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments